ত্রাণ চাই না,চাই নদী খনন ,স্লুইচগেট মেরামত ও পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ

আত্রাই (নওগাঁ)প্রতিনিধি : নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি কমতে শুরু করায় আত্রাইয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি সকল পয়েন্টে বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে হু হু করে পানি প্রবেশ করায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকার নিম্মাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে।যথাযথ নিয়মে বাঁধ তৈরী, নদী খনন এবং স্লুইচগেট মেরামত না করার কারণে প্রতিবছরই হাজার হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে আসছে। তাই ত্রাণ না দিয়ে যথাযথ নিয়মে বাঁধ তৈরী, নদী খনন এবং স্লুইচগেট মেরামতের দাবি জানান বানভাসি সহ এলাকার সাধারণ মানুষ । অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আত্রাই নদীর ৪টি পয়েন্টে, আত্রাই উপজেলায় ২টি সড়ক ১টি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নওগাঁ জেলার আত্রাই ,রাণীনগর ও মান্দা এবং রাজশাহীর বাগমাড়া নাটোরের নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলার প্রায় দু’শ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ছয় উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী। এসব এলাকার প্রায় ৮হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের কোটি কোটি টাকার মাছ। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ এখন উঁচু স্থানে, সড়ক, বেড়িবাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ পানিতে নিমজ্জিত বাড়ির পাশেই নৌকায় অবস্থান করছেন। এসব এলাকায় এখন বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবারসহ গবাদি পশুর খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে নানা রকমের পানিবাহিত রোগ। বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে নওগাঁর মান্দা-আত্রাই, বান্দাইখাড়া-আত্রাই, নাটোর-সিংড়া-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যাকবলিত বলরামচক গ্রামের রফিক উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, একদিকে করোনা ভাইরাসে কর্মহীন অপরদিকে বন্যার থাবায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তায় বসবাস। বাড়ীতে যা খাবার উপকরণ ছিলো সব ডুবে শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা কোথায় যাবো। কি খেয়ে বাঁচবো। উপজেলা কৃষি অফিসার কে এম কাউছার হোসেন জানান, এপর্যন্ত ১৩৭৪ হেক্টর আউশ, ২৮ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা, ২০০ হেক্টর বপন করা আমন, ৫০হেক্টর রোপনকৃত আমন, ১১ হেক্টর মরিচ, ৭৫ হেক্টর সবজি এবং ৭৭ হেক্টর পাটসহ সর্বমোট ২০৭৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান অনেকাংশে কমে আসবে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে আত্রাই নদী, ফকিন্নী ও ছোট যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে উপজেলার ১১০ জন চাষীর ২৭০টি পুকুরের ২৮০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২১কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছানাউল ইসলাম বলেন, উপজেলার আহসানগঞ্জ হাটের উত্তরে, বৈঠাখালি এবং পাঁচুপুর নামকস্থানে বাঁধ ভেঙ্গে ৮টি ইউনিয়নে ৫০টি গ্রামে ১৪ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়েছে। আহসানউল্লাহ মেমোরিয়াল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, আত্রাই উচ্চ বিদ্যালয়, পাঁচুপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আত্রাই পাইলট বালিকা বিদ্যালয়, পাথাইলঝাড়া ও বলরামচক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। নৌকাযোগে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ২ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার এবং চাল বিতরণ করা হয়েছে।

Next Post Previous Post