নুসরাত হত্যা ওসি মোয়াজ্জেমকে ৮ বছরের করাদন্ড
অনলাইন ডেস্ক : ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও করে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের সশ্রম কারাদ- দিয়েছে আদালত।
বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেছেন, তারা হাই কোর্টে আপিল করবেন।
সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত গত মার্চ মাসে তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। সেসময় সোনাগাজী থানায় তার জবানবন্দি নেন তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।
তার কয়েক দিন পর মাদ্রাসার ছাদে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের গায়ে আগুন দিলে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখন নুসরাতের ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হলে গত ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
পরিদর্শক মোয়াজ্জেমই ওই ভিডিও ছড়িয়েছেন- পিবিআইয়ের এমন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চার মাস আগে এ মামলার বিচার শুরু হয়।
মামলার শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনে দাঁড়িয়ে সোনাগাজীর সাবেক ওসি নুসরাতের জবানবন্দি ভিডিও করার বিষয়টি স্বীকার করলেও বলেছিলেন, জ্ঞানতঃ তিনি কোনো অপরাধ করেননি।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি গত ১৪ নভেম্বর বিচারককে বলেছিলেন, “এই অভিযোগে যত বড় শাস্তিই দেন না কেন, তার চেয়ে বড় শাস্তি আমি পেয়ে গেছি।”
বেআইনিভাবে নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও করার দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় মোয়াজ্জেমকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছরের কারাদ- দিয়েছেন বিচারক। আর সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ায় ২৯ ধারায় তাকে দেওয়া হয়েছে তিন বছরের কারাদ-।
দুই ধারার শাস্তি একটির পর একটি কার্যকর হবে বলে মোট আট বছর জেল খাটতে হবে বরখাস্ত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে। তবে হাজতবাসকালীন সময় নিয়ম অনুযায়ী সাজা থেকে বাদ যাবে।
কারাদ-ের পাশাপাশি তাকে দুই ধারায় পাঁচ লাখ করে মোট দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাকে আরও ছয় মাস করে মোট এক বছর সাজা খাটতে হবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা গত ২৭ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আগাম জামিনের চেষ্টায় গত ১৬ জুন গোপনে হাই কোর্টে গিয়েছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম। কিন্তু শুনানি হওয়ার আগেই পুলিশ শাহবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
১৭ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে জমিন নাকচ করে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। পরে ১৭ জুলাই আদালত আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।
মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, নুসরাতের মা, ভাই ও দুই বান্ধবী, দুই পুলিশ সদস্য ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১২ জন এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী এ মামলায় ছিল না।
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে গত ২৪ অক্টোবর মৃত্যুদ- দেয় ফেনীর নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই রায় ডেথ রেফারেন্স হিসেবে শুনানির জন্য ইতোমধ্যে হাই কোর্টে গেছে।