ফরমের মূল্য কমানোর দাবি রাবি ছাত্রনেতাদের
আহমেদ ফরিদ, রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রথম বর্ষ ¯œাতক ভর্তি পরীক্ষার ফরমের মূল্যকে অতিরিক্তি দাবি করে তা কমানোর জন্য আহবান জানিয়েছে ছাত্র নেতারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ফরমের মূল্য স্বাভাবিক ও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষায় আবেদন করতে একজন শিক্ষার্থীকে দুই হাজারের অধিক টাকা গুনতে হবে। যদিও গত বছর এ টাকার পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ তেরশ। তাই এ মূল্য কমিয়ে শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে করতে দাবি জানিয়েছে ছাত্র নেতারা।
ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত বছর ৫টি ইউনিট থাকলেও এ বছর তিনটি ইউনিটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। একজন ভর্তিচ্ছু কেবল একটি ইউনিটেই পরীক্ষা দিতে পারবে। প্রাথমিক ও চূড়ান্ত আবেদনের জন্য একজন ভর্তিচ্ছুকে দুই হাজার ৩৫ টাকা খরচ করতে হবে। গত বছর অনলাইনে প্রাথমিক আবেদন ফি ছিল ৫৫ টাকা। চূড়ান্ত আবেদন ফি ছিলো ‘এ’ ইউনিটের জন্য ১২৫৪ টাকা, ‘বি’ ইউনিটের জন্য ৭২৬ টাকা, ‘সি’ ইউনিটের জন্য ১২৫৪ টাকা, ‘ডি’ ইউনিটের জন্য ৯৯০ টাকা এবং ‘ই’ ইউনিটের জন্য ১১২২ টাকা। সে বার একজন ভর্তিচ্ছু একাধিক ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারতো। সে বার প্রতি ইউনিটে ১৬ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেরেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন ফরমের মূল্য বৃদ্ধিকে শিক্ষার্থীদের ‘পকেট কাটার প্রক্রিয়া’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করে আসছে। গত বছর বারশ থেকে তেরশ থাকলেও এবার দুই হাজারের বেশি করেছে। এক একটা অযৌক্তিক এবং শিক্ষার্থীদের পকেট কাটার একটা প্রক্রিয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গের শিক্ষা বিস্তারের একটা প্রতিষ্ঠান। যদিও একটা সকলের বিশ্ববিদ্যালয় তবে উত্তরবঙ্গের কথা চিন্তা করেই প্রতিষ্ঠানটা গড়ে ওঠেছে। যেখানে উত্তরবঙ্গের বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। উত্তরবঙ্গে এই মুহুর্তে একটা দূর্যোগপূর্ণ অবস্থা। বন্যার কথা চিন্তা করে অন্তত ফরমের মূল্য কমিয়ে আনা দরকার।’ ফরমের মূল্য না কমানো হলে পরবর্তীতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, ‘আবেদন ফরমের মূল্য বেশি হওয়া উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় তো জনগণের, সেখানে সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করেই ফরমের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা উচিত। ফরমের মূল্য কমানোর দাবিতে আগামীকাল (মঙ্গলবার) উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেবো। তারপরও তারা যদি সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তাহলে আমরা আন্দোলনে নামবো।’
ভর্তি ফরমের মূল্যকে এবার বৃদ্ধি করা হয়েছে দাবি করে ছাত্রদল রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, প্রশাসনের ভর্তি ফি’র মূল্য বৃদ্ধি করাটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সব শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করে তাদের বেশিরভাগই নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। একটি ফরমের মূল্য যতি এত বেশি হয় তাহলে প্রায়ভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে পার্থক্য কোথায়? প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা না করেই ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আমরা এর তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ইতিমধ্যে এর প্রতিবাদে আমরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। এর পরেও যদি কোন কাজ না হয় তাহলে আমরা আমাদের পরবর্তি কর্মসূচি পালন করব।
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফরমেট পরিবর্তন করেছে। গতবারের তুলনায় এবার ফরমের মূল্য বেশি করেছে। বিষয়টি আমাদের চিন্তায় আছে। আমরা খুব দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
তবে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে ভর্তি কমিটির সদস্য ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, ফরমের মূল্য বাড়ানো হয়নি। একাধিক ইউনিটে পরীক্ষা দিতে যে খরচ হত একটি ইউনিটে পরীক্ষা দিতেও সেই খরচই হবে। ইউনিট কমিয়ে আনার ফলে ফরমের মূল্য বেশি মনে হচ্ছে।
এর আগে ফরমের মূল্য কমানোর দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। গত রোববার একই দাবিতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবাণিজ্য বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ। গত সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। আজ মঙ্গলবার একই দাবিতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেছে ভর্তিচ্ছু সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ। ফরমের মূল্য কমানোসহ চার দফা দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে স্মারকলিপি দিয়েছে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
from BDJAHAN https://ift.tt/2OvDGAM
via IFTTT