আজ ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস
অনলাইন ডেস্ক : আজ ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়৷ কারাগারে নেয়া হয় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ৷ ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে তাঁদের চারজনকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়৷
সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে খুনিরা, সাজা দেওয়া যায় নি আসামিদের। তবে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও জাতীয় চারনেতা হত্যার খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ২০১৪ সালে এক বিশেষ সেল গঠন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কিন্তু এর পর থেকে এই বিশেষ সেলের কোন উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড দেখা যায় নি।
২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল অভিযুক্ত তিন আসামীর মৃত্যুদণ্ড ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আসামিদের মধ্যে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং এ কে এম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে৷
বাকি ১০ আসামির মধ্যে জেলহত্যার সঙ্গে জড়িত মোসলেম উদ্দিন, নারফাত আলী শাহ এবং আবুল হাশেম মৃধার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
খন্দকার আব্দুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী,আহমেদ শরিফুল হোসাইন, কিসমাত হোসাইন এবং নাজমুল হোসাইন আনসারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, যাবজ্জীবন প্রাপ্ত আবদুল মাজিদ বিদেশে মারা যান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পলাতক আসামিরা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে৷
আর পলাতক এই আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতেই ২০১৪ সালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা থেকে ১৪ জন প্রতিনিধি নিয়ে একটি সেল গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
এই সেলের সদস্যরা হলেন আইন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা, অ্যাটর্নি জেনারেল, পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর ডিরেক্টর জেনারেল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানসহ আরও অনেকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো শাহিদুজ্জামান বলেন, “বিশেষ সেলটি কাজ করছে। অভিযুক্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইন্টারপোলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে পুলিশ।”
তিনি বলেন শুধু মিটিং করার মধ্যেই সেলের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ নয়। “অপরাধীদের ধরতে ইন্টারপোল চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।”
হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে এই মামলায় রাষ্টপক্ষে প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার আসামীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার”।
তিনি জানান, যে দেশগুলোতে আসামিরা আশ্রয় নিয়েছে সেসব দেশের সরকার মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টিকে সমর্থন করে না। ফলে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটা কঠিন।
মন্ত্রী আরও জানান, কূটনীতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আসামীদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার। তিনি মন্তব্য করেন, “খুব শীঘ্রই একটা ইতিবাচক ফলাফল পাবার আশা করছি আমরা।”
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন বঙ্গবন্ধু এবং জেলহত্যার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা দেশের বাইরে পালিয়ে আছে৷ তাদের দণ্ড কার্যকরের মধ্য দিয়েই বিচার পূর্ণাঙ্গ হবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করছি তাদের ফিরিয়ে আনতে৷ আর এই ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের সংশ্লিষ্ট দেশের আইনসহ নানা বিষয় মোকাবেলা করতে হচ্ছে৷ আমরা আশাবাদী, তাদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করতে পারব৷”
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালে সংঘটিত হওয়া এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দাখিল হয় ২৩ বছর পর। ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়৷
২০০৪ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ে আসামি তিন জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
মুত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা৷
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এমএইচএম বি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, মো. কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন৷
২০০৮ সালে আদালত মোসলেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন এবং মারফাত আলী ও হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দেওয়া হয়।
এছাড়াও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফারুক, শাহরিয়ের রশীদ, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহীউদ্দিন আহমেদকেও বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ রায়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেয়া তিন জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখে৷
তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷