রাজাপুরের পা হারানো রিনা হাসিমুখে হাঁটছে রাজিয়া বেগমের দেয়া কৃত্রিম পায়ে
রাজাপুর প্রতিনিধি : শিশুকালে বাবার সঙ্গে খুলনায় থাকায় বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রিনা রেললাইনে বসে খেলার সময় ট্রেনের হর্ন শুনতে না পেয়ে ডান হাত ও পা হারিয়েছে। কিছু মানুষের সহযোগিতায় থাকার ঘর পেয়েছেন হাত-পা হারানো বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রিনা আক্তার। পেয়েছিলেন একটি কৃত্রিম পা। দেড় বছর ধরে ব্যবহার করায় সেটি নষ্ট হয়ে গেছিল। হাঁটতে গেলেই পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা লাগে ও কয়েকটি স্থানে কালো দাগও হয়েছে। কৃত্রিম পায়ের জন্য হাঁটতে গেলেই ব্যথায় চিৎকার করত ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালী গ্রামের রিনা আক্তার। এমন একটি মানবিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় রাজাপুর উপজেলা বড়ইয়া গ্রামের কৃতি সন্তান এবং বরিশাল বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন আলোর স্ত্রী সমাজসেবিকা রাজিয়া বেগম কৃত্রিম পা পুনস্থাপনের করে দেন। গত শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) প্রতিবন্ধী রিনাকে ঢাকায় নিয়ে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দিয়ে বুধবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পা স্থাপন এবং যাতায়াতসহ সার্বিক খরচ রাজিয়া বেগম নিজেই বহন করেন। সম্পূর্ণ খরচ বহন করে রিনার কৃত্রিম পা লাগানো এবং জেলা প্রশাসনসহ আরও কয়েক ব্যক্তির আর্থিক সহায়তা পেয়ে রিনা এখন হাসি মুখে হাঁটছে আর দানশীল ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করছেন। জানা গেছে, সংবাদ দেখে এর পূর্বে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দানশীল ব্যক্তি প্রতিবন্ধী রিনাকে ২৫ হাজার টাকা সহায়তা করেন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা গেছে, রিনার বাবা মোজাম্মেল হক তখন খুলনা জুট মিলে দারোয়ানের চাকরি করতেন। সেখানেই দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। বাবার সঙ্গে খুলনায় থাকায় শিশুকালে রেললাইনে বসে খেলার সময় বাক ও শ্রবণ প্রতবিন্ধী হওয়ায় ট্রেনের হর্ন শুনতে না পাওয়ায় রিনাকে ডান হাত ও পা হারাতে হয়েছে। ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান রিনা। এরপর দুই মেয়েকে নিয়ে খুলনা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তাদের মা জয়নব বিবি। নতুন করে বসবাস শুরু করেন এখানে। সেখানে একটি খুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন তারা। মায়ের ভিক্ষা ও প্রতিবেশীদের সাহায্যে চলতো তাদের সংসার। কিছুদিন পর তার মা জয়নব বিবিও মারা যান। এতিম হয়ে যান বড় বোন শিরিন বেগম ও রিনা। এরপর সেই খুপড়ি ঘরেই অর্ধাহারে অনাহারে তাদের বসবাস শুরু। ঝড় বৃষ্টি এলেই পানিতে ভরে যেত তাদের ছোট ঘরটি। নিরুপায় হয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হত দুই বোনকে। স্থানীয় কলেজছাত্র মেহেদি হাসান রিনা আক্তারের এ দুর্দশা দেখে পুটিয়াখালীর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাতকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন লোকদের সঙ্গে আলাপ করেন তাদের জন্য কিছু করার। এ বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রচারের ব্যবস্থা করেন তারা। সহায়তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬ হাজার টাকা ও দুই বান ঢেউটিন দেয়া হয় তাদের। মেরামত করা হয় তাদের সেই ঘরটি। এছাড়াও সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের আর্থিক সহায়তা ও শ্রম দিয়ে একটি তহবিল গঠন করেন। স্থানীয় অনেকেই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে। সবার সহযোগিতায় আলোর মুখ দেখেন তারা। একটি কৃত্রিম পা দেড় বছর ধরে ব্যবহার করায় এখন সেটি নষ্ট হয়ে গেছিল। যার কারণে পায়ের কয়েকটি স্থানে কালো দাগও হয়েছিল। হাঁটতে গেলেই কৃত্রিম পায়ের জন্য এখন প্রচন্ড ব্যথায় চিৎকার করতো রিনা। প্রতিবেশীরা জানান, রিনার বাড়ি থেকে কোনো শব্দ পাইতাম না আমরা। মাঝে মাঝে শুধু কান্নার শব্দ আসত। কথা বলতে পারে না, কিছু শোনে না, চলাফেরা করে অনেক কষ্টে। অনেক কষ্ট করে বেঁচে আছে মেয়েটা। তারপরেও রিনার কাছে অনুভূতি জানতে যাওয়ার চেষ্টা করলে ইশারায় মাথা নেড়ে এ প্রতিবেদককে বোঝান, তিনি এখন ভালো আছেন। সবার জন্য দোয়া করছেন (হাত উঁচু করে বোঝাতে চেষ্টা করেন)। সমাজসেবিকা রাজিয়া বেগম জানান, সংবাদটি দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছিলো, তাই রিনার দায়িত্ব নিয়ে একটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে দিয়েছি। এখন রিনা হাটতে পারে, যা দেখে আনন্দে বুকটা ভরে গেছে। নিজের কাছে ভাল লাগছে। সমাজের সকলের উচিৎ অবহেলিত ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে সহযোগীতার হাত বাদিয়ে দেয়া।