দিনাজপুরে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর উদ্যোগে শ্রমজীবী শিশু অধিকার ও তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে আলোচনা ও প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠিত

মো: মিজানুর রহমান (ডোফুরা), দিনাজপুর : দিনাজপুর এরিয়া প্রোগ্রাম, নর্দাণ বাংলাদেশ রিজিওন, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত শ্রমজীবী শিশু অধিকার ও তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে আলোচনা ও প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শ্রমজীবী শিশুদের সফলতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
২০ আগষ্ট, ২০২০ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় দিনাজপুর শহরের ঈদগাবস্তিস্হ ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর কার্যালয়ে শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম প্রতিরোধ প্রকল্পের আয়োজনে শিশু শ্রমিক ও সাংবাদিকবৃন্দের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন দিনাজপুর এপি’র চাইল্ড লেবার প্রজেক্ট এর প্রোগ্রাম অফিসার ডরিস লিয়া হাঁসদা এবং সহযোগী হিসেবে ছিলেন চাইল্ড লেবার প্রজেক্টে সহায়তাকারী মো. বেনজির আলী ও সুমনা বেগম।
আলোচনা ও জরিপ করে জানা যায়, বেলি আক্তার। বাবা দিনমজুর। পরিবারের ৬ জন সদস্য। তিন বোন ও এক ভাই। মা গৃহিনী, বাবা বেশিরভাগ সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকতেন এবং শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতো তারা।
পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে স্কুলে যাওয়া হয় নাই তার। স্বপ্ন ছিল একজন শিক্ষক হওয়ার, পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ হওয়ার‌ও। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করে। মায়ের পক্ষে একাই সমস্ত খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাই সে গৃহকর্মী হিসেবে মায়ের সাথে কাজ শুরু করে। পরে বুঝতে পারল সে শিশুশ্রম হিসেবে কাজ করছে।
এমতাবস্থায় ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ শিশুশ্রম প্রকল্পের সহায়তায় সেলাই মেশিনের উপর বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণ শেষে প্রকল্প থেকে একটি সেলাই মেশিন তাকে দেওয়া হয় এবং এই সেলাই মেশিন তার জীবন পরিবর্তন করে দেয়। এখন সে অন্যের বাড়িতে কাজ ছেড়ে দিয়ে নিজে সেলাইয়ের কাজ শুরু করে। এতে সে কাপড় সেলাই করে দিনে ১২০/=থেকে ১৫০/= আয় করে।
তবে ২০১৮ সালের শেষে বাবা মারা গেলে পরিবারের সকলেই ভেঙ্গে পড়ে। তারপর সে একটি টেইলার্সের দোকানে কাজ শুরু করে। এখন সে ৪০০০/= থেকে ৫০০০/= আয় করে, যা নিজের এবং পরিবারের জন্য সফলতা বয়ে আনে।
সফলতার সাক্ষী হিসেবে বেলী আক্তারের মতো আরো অনেক শিশু শ্রমিক এর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে – মুকুল দত্ত (পাটুয়াপাড়া), মিজানুর রহমান (উত্তর গোসাইপুর), শশী আক্তার (চাউলিয়াপট্টি)। যারা ওয়ার্ল্ড ভিশন এর শিশু শ্রম প্রতিরোধ প্রকল্প থেকে ৩ মাস মেয়াদী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও আইজিএ সাপোর্ট এর মাধ্যমে নিজেদের জীবন পরিবর্তন ও সফলতা অর্জন করেছে।
উল্লেখ্য যে, শিশুর প্রতি শারীরিক সহিংসতা বন্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম প্রতিরোধ প্রকল্পটি বর্তমানে দিনাজপুর সদর ও কাহারোল উপজেলায় ৩৩৭২ জন শিশুকে নিয়ে কাজ করছে। তন্মধ্যে বিগত তিন বছরে দিনাজপুর সদরে প্রথম ধাপে ১৫ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ১২ জন শিশুকে সেলাই প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। হাউস ওয়ার ইলেকট্রনিক এন্ড রেফ্রিজারেটর প্রশিক্ষণ দে’য়া হয় প্রথম ধাপে ১৫ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ১০ জন শিশুকে এবং অটোমোবাইলে ৪ জন শিশুকে প্রশিক্ষণ দে’য়া হয়। ঐ প্রকল্পের আওতায় ১৩ জন শিশুকে ভ্যান ও ৩৭ জন শিশুকে গরু দেওয়া হয়। ভকেশনাল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ২৬ জন শিশুকে এবং ছাগল প্রদান করা হয় ৩৬টি পরিবারের মধ্যে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর শিশুশ্রম প্রকল্পে গৃহীত উদ্যোগসমূহ – ০১. শিশু অধিকার / নিরাপত্তা ও বর্তমান আইন / নীতিমালা বিষয়ক সচেতনতা মূলক সেশন পরিচালনা। ০২. জেলা / উপজেলা / ইউনিয়ন শিশুশ্রম পরিবেক্ষন কমিটির দক্ষতা বৃদ্ধি। ০৩. শিশু শ্রমিকদের (বয়স ১০-১৭) কারিগরি প্রশিক্ষণ ও সহায়ক উপকরণ প্রদান। ০৪. শিশু শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক স্কুলগামী করার লক্ষ্যে রেফারেল মেকানিজম প্রতিষ্ঠা। ০৫. অভিভাবক ও পরিচর্যাকারীদেরও আয় বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন ও প্রশিক্ষণ প্রদান। ০৬. কিশোরীদের ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিছন্নতা ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা। ০৭. শিশুদের জন্য জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করা, শিশুদেরকে শিশুশ্রম থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য শর্ত সাপেক্ষে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। ০৮. শিশু, মাতা-পিতা, কমিউনিটি তথা ফেইথ কমিউনিটি, সিভিল সোসাইটি / সুশীল সমাজ এবং জনগণের জন্য সেবা প্রদানে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা / কর্মচারীদের সাথে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ০৯. সরকারি দপ্তরসমূহ, নিয়োগকর্তা সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, সিভিল সোসাইটি / সুশীলসমাজ ব্যক্তিবর্গের সাথে অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনা করা। ১০. সরকারি (বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা) পর্যায়ে শিশুশ্রম নিরসন কমিটিগুলো কার্যকর করা।

Next Post Previous Post