আক্ষেপ

জামাল উদ্দিন জীবন : সন্ধ্যা সাতটা বাজে ঘড়িতে অফিস হতে আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরছে আপন।খুধাও পেয়েছে।কি খাবে ভাবছে হোটেলের সামনে এসে।ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখে একজন বৃদ্ধলোক একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে।লোকটি হয়তো কিছু খাবার জন্য ভিতরে প্রবেশ করতে চাইছে কিন্তু হোটেলর বেয়ারা তাকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কাছে গেল আপন।লোকটির পরনে কাপড় চোপড় বেশ ময়লা জির্ন শির্ন দেহখানা মুখে বয়সের ছাপ পড়েছে। কৌতুহল বসত কি হয়েছে সেটা জানার জন্য তার কাছে গেলাম। কেন ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছ না আপন জানতে চায়? জৈনক ব্যক্তির কাছে জানতে চায় আপনি কিছু খাবেন।লোকটি বলল জি খাব।আপন আসুন আমার সাথে ভিতরে আসুন আপনি।খাবারের কথা বলে আপন তার সাথে আলাপ করছে আপনার পরিচয় কি মানে কি করেন আপনি। লোকটি নিজের পরিচয় দিতে কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করছে।এক প্রকার জোড় করেই তার সাথে ঘন্টা খানেক কথা বল্লাম আমি। আলোচনার এক পর্যায়ে জানতে পারলাম তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন জীবন বাজি রেখে।এখন তার দিন কাটে অর্ধহারে অনাহারে বিনা চিকিৎসায় তাকে দেখার মতো পাশেও কেউ নেই ।জানতে চাই পরিবারে কে কে আছে আপনার।দুঃখের সাথে বলে বাবা তুমি কে কেন জানতে চাইছো আমার এসব কথা কি হবে শুনে।একটা সময় সব ছিল আমার এখন বলতে পার কিছুই নেই একা আমি। আপনার পরিবারের লোকজন কোথায়।স্ত্রী আর দুই মেয়ে নিয়ে আমার পরিবার ছিল।আমি যখন যুদ্ধে যাই তখন সকলকে রেখে গিছি এসে দেখি সব কিছু আগের মতো নেই।স্ত্রীটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।কেন পাকিস্তানী মেলেটারিরা তাকে নিয়ে ছিল তাদের ক্যাম্পে সেখান হতে আর ফিরে আসেনি আমার বাড়িতে। মেয়ে দুটো তখন ছোট।আমার এক আত্নীয়ের কাছে ছিল বছরে দুয়েকের মতো।যুদ্ধ শেষ হলো আমি সবার মতো সেই সময়ে ফিরে আসতে পারিনি দেশে।আমার পায়ে গুলি লেগেছিল অনেক দিন চিকিৎসা করাতে হয়েছিল ভারতে।বছর দেরেক পরে দেশে ফিরে আসলাম।এসে যা দেখলাম তা নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারিনি আমি আর কোন কথা বলতে পারছেনা হারুন মিয়া।দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে তার দুচোয়াল বুক ভাসিয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এতোদিনের কষ্টের জল যেন অগ্নিগিরির মতো তার চোখ হতে ঝরে পড়ছে।কথাগুলো শুনে কিছুটা সময়ের জন্য আমিও থমকে গেলাম।কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি আমি নিজেও জানি না।একরাশ শূন্যতা ও নিরবতা ঘিরে ধরেছে আমাকে।নিরবতা ভঙ্গ করে আবার বললাম কি দেখেছেন ফিরে এসে।হারুন মিয়া বলে আমার বাড়িঘর দখল করে নিয়েছে গ্রামের মেম্বার আর জায়গা জমি সব অন্যরা নিয়ে গেছে।সব হারিয়ে সর্ব শান্ত এখন আমি জীবনের তাগিদে বাঁচার আসায় কিছু দিন সব কিছু ফিরে পেতে চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে আসি ঢাকাতে।মেয়েদের ফিরে পাবার চেষ্টা করেননি।অনেক জায়গায় খুঁজেছি কিন্তু কেউ কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি আমাকে।তাই সে আসাটাও বাদ দিয়েছি শুধু দোয়া করি ওরা যেখানে আছে আল্লাহ যেন ভাল রাখে।মানুষের জীবন কতোটা নির্মম আর কষ্টকর হয় তা মানুষের সাথে না মিশলে বলা বড় কঠিন।একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো আমার।কথাগুলো শুনে আমার নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে বড় কষ্ট হচ্ছে তখন কিন্তু তাকে বুঝতে না দিয়ে চুপ থাকলাম। আমার কাছে জানতে চায় আমি কেন তার কাছে এতো কিছু জানতে চাইলাম কি করি এসব আর কি। আমার পরিচয়টা দিয়ে বললাম আমি একজন সাধারন মানুষ।আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কথা বললাম।এখন কি করতে চান মেয়েদের কি আর খোঁজ খবর করবেন না।হারুন মিয়া বাবারে কি বলবো দুঃখের কথা মেয়েরা হয়তো এতো দিনে অনেক বড় হয়ে গেছে।বিয়ে শাদি হয়ে গেছে আমাকে দেখলেও চিনতে পারবে না। তোমাকে একটা কথা বলতে চাই কিছু মনে করবে নাতো।জি বলুন তোমার কোন ঠিকানা আমাকে দিবে ভয় পেয়ো না প্রয়োজন হলে তোমার কাছে যাব নয়তো না.
Next Post Previous Post