কোভিড-১৯ বদলে দিবে বিশ্ব পরিস্থিতি
রশিদুর রহমান রানা : করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পৃথিবীর বাহ্যিক পরিস্থিত ও কুটনৈতিক পরিকল্পনা সহজেই বদলে ফেলছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। যা আরো প্রকটভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে দেশে দেশে। কারণ দলীয় ও সামরিক কর্মকান্ডে ব্যাপক অর্থ খরচ করা হয়েছে প্রকারন্তরে মানুষের মৌলিক চাহিদার বিষয়গুলো উপেক্ষিতই রয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও বিশ্ব প্রতিনিয়ত করোনা নিয়ে টালমাটাল অবস্থার মধ্যে পতিত হয়েছে । মহাশক্তিধর থেকে অনুন্নত দেশ কিংবা দেশের জনগন সকলেই করোনার ছোবলে আজ বিপদে পতিত হয়েছে। আশা জাগানোর মতো মতো কোন সু-খবর কেউ এখনো দিতে পারেনি ।
যদিও কয়েকটি দেশ করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্রণে আনতে পেরেছে। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, শক্তিশালী রাষ্ট্রপ্রধান এবং তাদের সহযোগীরাও একরকম পালিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন, সেখানে আমজনতার অবস্থা কি হবে তা সহজেই প্রতিয়মান। লকডাউন অর্থনীতির চাঙ্গাভাব ভঙ্গুর করে দিয়েছে ফলে মৃত্যু, অসুস্থতা, বেকারত্ব, ক্ষুধা, হতাশা ইত্যাদি অনিশ্চিত বিষয়সমূহ মানুষকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে । হতাশাগ্ৰস্ত মানুষ কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা জীবনকে বাচাঁনোর জন্য। ব্যর্থতা ঢাকতে একদেশ অন্য দেশকে দোষারোপ করছে। অন্যদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা জাতিসংঘের মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান সমূহ কোন উপায় বের করতে পারছেনা। এদিক থেকে আমেরিকার মতো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও অসহায় হয়ে পরেছে। আজ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাঁডিয়ে মানুষের নতুন উপলব্ধি হচ্ছে কোন দেশের সরকার জনগনের জীবনমান উন্নয়নের কথা তেমন একটা ভাবেনি। যা ভেবেছে বিক্ষিপ্তভাবে।
পাশাপাশি ক্ষুধা, বেকারত্ব, দারিদ্র, অকালমৃত্যু পৃথিবীর মানুষকে নতুন জীবনবোধের হিসাব শেখাচ্ছে। যেখানে মহামারির প্রভাবে স্তব্ধ অর্থনীতি যদি আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সীমিত আকারেও ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিশ্ব পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিবে। ফলে ব্যাপক জন অসেন্তোষ তৈরি হবে সর্বত্র।মিথ্যা উন্নয়নের গল্প শোনানো রাষ্ট্র নায়কদের এ বিপদ অনেকাংশে বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এত বড় বিপর্যয় কয়েক শতাব্দীতে আসেনি। বিবেচনায় রাখতে হবে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা এখন প্রায় ৭০০ কোটি । যা অন্যান্য শতকের মহামারির জনসংখ্যার চেয়ে অনেকগুন বেশী। ফলে মানুষের ন্যুনতম মৌলিক চাহিদা যোগান দেয়া সকল দেশের সরকারের পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
এই মহামারির মধ্যে বিশ্বের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নিশ্চয়ই নতুন হিসেবনিকেশ শুরু করেছেন। উপরোক্ত কথাগুলোর বিবেচনায় সহজেই প্রতিয়মান হয় যে, পৃথিবীর রাজনৈতিক চরিত্রের একটা নতুন মেরুকরণ দেখা দিবে। চীন -ভারত লাদাখ সীমান্তে ব্যাপক যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমেরিকা পারস্য উপসাগরে নিজেদের রণতরীগুলোর ১০০ মিটারের কাছাকাছি যে কোন ইরানি নৌযান ধ্বংসের সরাসরি নির্দেশ দিয়ে রেখেছে। ইরানের পাল্টা হুমকিও চলমান আছে। হঠাৎ কি এমন হলো যে, ইতিমধ্যে প্রতিবেশী নেপাল, শক্তিধর ভারতের বিরুদ্ধে কঠিন হুংকার দিয়েছে, এমনকি তাদের মানচিত্রে বর্তমান ভারতের অংশবিশেষ চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইতালিসহ কয়েকটি দেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবার বিষয় বিবেচনা করছে। তেল নিয়ে আমেরিকা তার প্রিয় বন্ধু সৌদি আরবকে সরাসরি হুমকি দিয়েছে। পুঁজিবাদের ধর্ম অনুযায়ী নতুন জায়গা বা বাজার তৈরি করতে হলে শূন্যস্থান তৈরি করা দরকার, সেটি যুদ্ধের মাধ্যমে হোক কিংবা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে হোক। বাজার টিকে থাকতে হবে। তাতে যদি পৃথিবীতে ব্যাপক জীবনের বিসর্জন হয় তাতেও কোন সমস্যা নেই। এই বৈষিক মহামারি গণতন্ত্রের সংজ্ঞার পরিবর্তন এনেছে। জনগণ নয় গণতন্ত্র এখন প্রভূত্ববাদীদের শেখানো মুখের উক্তি মাত্র। আব্রাহাম লিংকনের- ” জনগণ কর্তৃক, জনগণ দ্বারা, জনগণের জন্য “গণতন্ত্রের এ সংজ্ঞা এখন খুব কষ্ট করে পৃথিবীর দু-একটি দেশে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে।
সুতরাং এটি নিশ্চিত বলা যায়, একদিকে লক্ষ কোটি ক্ষুধা-দারিদ্র্যে আক্রান্ত দিশেহারা মানুষ আর অন্যদিকে কর্পোরেট প্রভুরা। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে উঠে পড়ে লাগবে নব্য প্রভূরা। যে যাই বলুক অতীতের ন্যায় এ দূর্যোগের মধ্যদিয়ে পৃথিবীর ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জন্ম হবে নতুন এক পৃথিবীর। সুতরাং মানুষের অধিকারের জায়গা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্য সমাধানের পথও উন্মোচন করতে হবে কর্তাব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের।