একজন রত্নগর্ভা মা জোহরা বেগম

মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন,চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের একজন মহীয়সী নারী, একজন আলোকিত মা জোহরা বেগম ১৯৩৪ সালে হাটহাজারী উপজেলার কাটিরহাট গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল ওয়াদুদ সেরেস্তাদার, মাতার নাম তৈয়বা খাতুন।
জোহরা বেগম একজন পরহেজগার ধর্মপ্রাণ, নিরহংকারী,সত্য ভাষী ও দানশীলা প্রভৃতি গুণাবলীতে ছিলেন অনন্য অসাধারণ। তাঁর ব্যবহার ছিল অমায়িক, তিনি সবসময় আল্লাহর যিকির ও দরুদ শরীফ পাঠে রত থাকতেন। তিনি বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতেন এবং ছোটদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করতেন। শিশুদের প্রতি তাঁর প্রাণ খোলা স্নেহ-মমতা ছিল এক অনন্য।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরকল ইউনিয়নের আরেক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান চট্টগ্রামের বিশিষ্ট প্যাথলজিস্ট ডা. আবদুল মতিন (তার পিতার নাম মাওলানা মোজাহেরুল হক। তিনি হুগলী মাদরাসায় সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন। লোকের মুখে জানা যায়, তাঁর নামে মৌলভী বাজার নামকরণ হয়।)’র সাথে ১৯৪৬ সালে এপ্রিল মাসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। জোহরা বেগম চার পুত্র এবং দুই কন্যা সন্তানের জননী। এক মায়ের ছয়টি সন্তানের সবাই সফল হওয়ার নজির খুব বেশি নেই। চট্টগ্রামের জোহরা বেগমের ছয় সন্তানই সফলতা লাভ করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। ওনার ছয় সন্তানের প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষিত, দেশের গর্ব। তিনি তার ছেলে মেয়েদের সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা ছাত্র জীবনে যেমনিভাবে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন তেমনিভাবে কর্মজীবনেও ব্যতিক্রম নন। তার সব ছেলেমেয়েরা দেশ ও জাতির জন্য নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন। এমনকি আন্তর্জাতিকভাবেও। (১) নাসা’র বিশিষ্ট পারমাণবিক বিজ্ঞানী ডক্টর হাসান জিল্লুর রহিম। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়াস ফিজিক্স বিভাগের অধ্যাপক।
(২) বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা, ব্র্যাক এর বর্তমান চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
(৩) হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর ডাঃ প্রফেসর মহসিন জিল্লুর করিম।(৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্য ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকাতে সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি আদনান মোরশেদ।
(৫) দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী সার্জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডাঃ প্রফেসর তাহমিনা বানু। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রায় ১১০টি তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের একমাত্র চিকিৎসক হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অক্সফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ক্লাস নেন। তাঁর ‘লো কস্ট কোলাবোরেট’ ফান্ড ২০১৭ সালে যাত্রা করা এ ফান্ডের মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রায় ২৫০ জন রোগীর সেবা দেওয়া হয়েছে। যেখানে কোটি টাকার চিকিৎসা খরচ হয় শিশুদের এমন জটিল রোগ বিনা পয়সায় করা হয়।
(৬) আদিমা বানু একজন সফল উদ্যোক্তা এবং গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।

জোহরা খাতুন একজন সমাজসেবী ছিলেন। তিনি অসংখ্য জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কাজ সম্পাদন করেন। এলাকার মানুষের প্রতি পরম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা ছিলেন। তিনি আমৃত্যু পর্যন্ত মানুষ ও মানবতার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে গেছেন। তিনি অন্যের দুঃখে বৃথিত আর অন্যের সুখে তৃপ্তি অনুভব করতেন। তাঁর পরিবার অর্থ যশ ক্ষমতা সব কিছু পাওয়ার পরও কোন দিন তিনি বংশীয় ঐতিহ্য বাহাদুরী করতেন না।
তিনি একজন রত্নাগর্ভা মা হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে অসংখ্যবার পুরস্কৃত হয়েছেন। মহীয়সী নারী জোহরা বেগমের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ৮৭ বছর। ১৭ জুন রোজ বুধবার দিবাগত রাত ২টায় চট্টগ্রাম নগরের নিজ বাস ভবনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বুধবার সকাল এগারটায় চন্দনাইশের বরকলস্থ গ্রামের বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুক।আমিন।

Next Post Previous Post