শীতের উষ্ণতায় উঁকি দিচ্ছে ‘টিউলিপ’
গাজীপুর প্রতিনিধি : তুরস্কের জাতীয় ফুলের নাম টিউলিপ, নেদারল্যান্ডেও টিউলিপ ফুলের ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। বর্তমানে নেদারল্যান্ডই প্রধান টিউলিপ ফুল উৎপাদনকারী দেশ। টিউলিপকে নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্প। তাই দেশটি প্রতিবছরেই পালন করে টিউলিপ উৎসব।
শীত আবহাওয়ার দেশ ছাড়া এশিয়া মহাদেশের ভারত, আফগানিস্তান ও গুটিকয়েক দেশ ছাড়া এমন দৃষ্টি জুড়ানো টিউলিপ ফুলের দেখা মেলা ভার। ছয় ঋতুর আমাদের দেশে একসময়তো এই ফুলের কথা কল্পনাই করা যেতো না। তাই মনের মাধুরিতেই এই ফুলের ভালবাসা হৃদয়াঙ্গম করতে হতো বাঙালিদের। তবে এখন দুয়ার খুলে দিয়েছে এক ফুল চাষির প্রচেষ্টা। তিনি তার নন্দকাননে টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে দেশ জুড়েই এর চাষে সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুরের ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেনের বাগানে দীর্ঘ শীতের ক্লান্তি ভুলিয়ে এখন টিউলিপগুলো উঁকি দিচ্ছে। স্বর্গীয় এক অনুভূতি বিরাজমান দেলোয়ারের ফুল বাগানে। দৃষ্টিনন্দন এই টিউলিপগুলো দেখতে উৎসুক মানুষেরও যেনো বাড়ছে আগ্রহ। তার পুরো বাগান জুড়েই এখন টিউলিপময় ভালোবাসার গল্প।
ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন তার এই ফুল বাগানের নাম দিয়েছেন ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স’। এর আগে ২০১২ সালে তিনি জারবেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়ে ফুল চাষ সম্প্রসারণে ভূমিকা রেখেছিলেন। একজন সফল ফুলচাষি হিসেবে তিনি ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকে ভূষিত হন। সম্প্রতি তিনি দেশে প্রথমবারের মত ভাইরাসমুক্ত সবজির চারা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছেন।
দেলোয়ার হোসেন জানান, আমাদের দেশে প্রতিবছর ব্যাপক ফুলের চাহিদা রয়েছে। এর চাহিদা মেটাতে হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করে। ফুল চাষে জড়িয়ে রয়েছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে পড়ছিলাম। অর্থনীতির ও চাহিদার কথা চিন্তা করেই বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে তিনি স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেন। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও তিনি থেমে থাকেননি। তাই পেয়ে যাচ্ছেন একের পর এক সফলতা। জারবেরা, চায়না গোলাপের পর তিনি টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে ফের পেয়েছেন সফলতা। পরীক্ষামূলক কাজ শেষে তিনি শুরু করবেন এই ফুল চাষ সম্প্রসারণের কাজ। টিউলিপ বর্ষজীবি ও বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত। প্রজাতি অনুযায়ী এর উচ্চতাও ভিন্ন হয়।
তিনি জানান, পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ থাকলেও তিনি গত ৮ ডিসেম্বর তিনি নেদারল্যান্ড থেকে ১ প্রজাতির ৪ রঙের এক হাজার টিউলিপের বাল্ব এনে ১৫ ডিসেম্বর তিনি তার বাগানে রোপন করেছিলেন। ৪৫ দিন পরিচর্যা শেষে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে টিউলিপ ফোটা শুরু হয়। দেশীয় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে যার স্থায়ীত্ব হতে পারে ২০-২২দিন।
তার মতে, টিউলিপ ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শীতের গভীরতা। সাধারণত এই ফুল চাষে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রার প্রয়োজন। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীত মৌসুমে তাপমাত্রা কম থাকে বিধায় সেখানে টিউলিপ ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ফুল গবেষক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন খান জানান, টিউলিপ সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেকেই বাসাবাড়ির টবে বা শখের বশবর্তী হয়ে এ ফুলের চাষ করে আসছে। তবে ফুল পাওয়া খুব স্বাভাবিক নয়। দেলোয়ারের বাগানে টিউলিপে ফুল ফোটায় এ থেকে আশার সঞ্চার হয়েছে। দেশের বাণিজ্যিকভাবে এখনো এই ফুল চাষ শুরু হয়নি। তবে শীত মৌসুমে আবহাওয়া ফুলের অনুকূলে থাকলে এই ফুলের চাষ করা যেতে পারে বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোতে।
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুৃব আলম জানান, বর্তমানে উচ্চমূল্যে টিউলিপ ফুল আমদানি করে আমাদের দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। একজন আদর্শ ফুল চাষি দেলোয়ারের টিউলিপ ফুল ফোটানোর সফলতায় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ ফুলের চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতেও ছোঁয়া লাগবে।