স্বরচিত পাঁচটি কবিতা

দাহ
নজির আহমেদ

নাগিনী রায় স্পষ্ট নয়—
কী চায়,কেন যে চায়—জানেনা নিজেই।
দাম্পত্য ভূগোলে—
দু’জনকে পৃথক করে রেখেছে ব্লু লাইন।

সব কটা জানালাই খোলা,
হাওয়া নেই।
মায়ার বৃত্তে ডানা ঝাপটায় শান্তির পায়রা।
সম্প্রীতি বসত গড়তে চায় অতিক্রান্ত বন্দর ঠিকানায়—
সবচেষ্টা বিফলে যায় শ্রীচৈতন্য ফিরে না ঘরে।

হৃদয়ের গোপন একান্ত আপন।
গাত্রদাহ হজম করতে—
দর্জি বাড়িতে ধৈর্য্যর পরিচ্ছদ বানাতে দাও বন্ধু;
এ ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই।

সরল স্বীকারোক্তি
নজির আহমেদ

বিশেষ্য বিশেষায়িত হতে গেলে—
প্রত্যয়জনিত কারণে বাধা,উৎকর্ষতা শুদ্ধ নয়।

অধিকরণের সপ্তমীতে ঝুলন্ত প্রশ্নঃপৃথিবীতে কে কার?
মাছের মার আছার ব্যবহার ঠিক তাই।

বিপুল উদ্যোগে তুচ্ছ অর্জন,
ভিতরে বিষধর সাপ মানুষের সুরতে গোপন।
আত্নার নোঙর গাঁথবো কোথায়?

খাস তালুকের প্রজার মত জীবন—
কেউ কেউ মেনে নিচ্ছে,আমি তো পুরুষ মানুষ;
পারবো না হতে—তাদের মতো কখনও….

কালসূত্র
নজির আহমেদ

যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রযুক্তির উৎকর্ষতায়—
পৃথিবী হাতের কাছে চলে আসছে,
বেড়ে চলেছে ইহজাগতিক তরক্কীর শ্রীবৃদ্ধির আর্কষণ।

অজ্ঞানতা এবং মুর্খতা চর্চা করে ধাতব সভ্যতা।
অস্থির প্রতিযোগিতা এবং বর্বরতা ঢুকে যাচ্ছে সমাজের অন্ধ গলিতে।

নৈতিক অবক্ষয় জয় করে নিচ্ছে হৃদয়।
ধর্ষিত মানবতার ওপর পতপত উড়ছে স্বার্থ’র পতাকা।
মানুষের চেয়ে মানুষের সূরত আজ জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
মানুষ জন্ম বুঝি আজম্ম পাপ;
এখন ভাগ্য পরিবর্তনে সফল সূত্র পাপের ঠাপ।

জটিল ব্যাকরণ
নজির আহমেদ

মধ্য পদলোপী কর্মধারায় জেগে থাকে জ্যোৎস্নারাত,
সম্পর্কটার লিঙ্গান্তর হয় না বলে—
আলোছায়া দ্বন্দ্বসমাস রাজপথে শ্লথগতির পরিব্রাজক।
রূপতত্ত্বে জেগে থাকে প্রকৃতি ও প্রত্যয়,
বাংলা ব্যাকরণ জটিল হয় রসায়নের দ্বিধা ও সংকোচে।

ব্যাস বাক্য’র ব্যাসার্ধে সওয়ারী সাহসী কলম্বাস,
সন্ধীতে বন্ধী হয়ে আছি মিনার চুড়ায়।
মন্দিরে মন্জুরী ঘুমায় নাকি তৃপ্তি প্রাপ্তির আশায়(?)
যোগরুঢ় জলদ দরোজা অনাবিষ্কৃত—
সম্পদের বিপরীতে আপদের নাম এক চাকার রথ।

পারস্য কন্যা পেরেশান হৃদয় করে দ্যায় খান খান,
গুরুত্ব বাড়ায় দূরত্ব গন্ধমবৃক্ষ ধীমাণ।
মিশ্র ক্রিয়ার স্তব্ধ নিরস কন্ঠ শুধায় গোল্লায় যাও—
তনুশিল্প যারে খুশি তারে করবো দান;
কর্মে সপ্তমী স্বার্থ ফুরোবার পর বাজায় বাহুল্য গান।

সাম্য
নজির আহমেদ

নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে—
সকল মানুষই সমান।
সমান অধিকার কথায় আছে,
কিন্তু কাজে কই?
মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি যখন প্রশ্নবিদ্ধ
তখন ঝুলে থাকে ভিত্তি।

মানুষ অধিকারে সমান,
বা প্রায় সমান;
বাস্তব ক্রিয়াকর্ম তৈরি করে দূস্তর ব্যবধান।
তবু সমানের মাপকাঠি—
এঁকে দ্যায় প্রাণের স্বভাব প্রকৃতি।

এই যে আকাশ,মুক্ত বাতাস,
সমানভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস-এরই নাম সাম্য।
দেশে দেশে নানান বেশে—
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার কাম্য।

Next Post Previous Post