কাঁঠালিয়ার সেই নারী নাপিত শেফালীকে জমি ও ঘর বরাদ্দের উদ্যোগ
রহিম রেজা, ঝালকাঠি থেকে : বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার বলতলা গ্রামের দোগনা বাজারের আলোচিত ‘হার না মানা’ নারী নাপিত শেফালীকে জমি ও ঘর বরাদ্দের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে নারী নাপিত শেফালী রানী শীলকে জমি ও ঘর বরাদ্দের কাগজপত্র তুলে দিতে তার বাড়ি উপজেলার বলতলা গ্রামে যান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর রহমান এমপি। তখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর রহমান এমপি বলেছেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন, যে বাংলাদেশে কেহ গৃহহীন থাকবেন না। সেই লক্ষে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঝালকাঠির কাঠালিয়ার একমাত্র নারী নাপিত শেফালী রানী শীলকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিেের্দশে তার জন্য ৪ শর্তাশ জমি ও ঘর বরাদ্দের জন্য কাগজপত্র নিয়ে তার বাড়িতে এসেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই তার ঘর নির্মানের কাজ শুরু হবে। এ কার্যক্রম থেকে এটাই প্রমান হয় যে, বাংলাশে আওয়ামীলীগের সরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার, একটি কল্যানমূখী সরকার। শেখ হাসিনা একজন মানবতাবাদি নেতা, মানবতাবাদি প্রধানমন্ত্রী। পরে এ উপলক্ষে স্থানীয় বলতলার দোগনা বাজারে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী। ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলীর সভাপতিত্বে সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মোহসীন, ঝালকাঠির পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনসহ জনপ্রতিনিধি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। নারী নাপিত শেফালী রাণী শীল ও তার মেয়ে সাগরিকা রাণী জানান, এতো দিন অনেক কষ্টে তাদের জীবন যাপন করতে হয়েছে। এখন আর তাদের সেই কষ্ট থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের প্রতি নজর দেয়ায় তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার মেয়েদের পড়ালেখা শেষে চাকুরির ব্যবস্থার জন্য দাবি জানান শেফালী রাণী শীল। ঝালকাঠির কাঠালিয়ার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা গ্রামের দোগনা বাজারে ক্ষুর, কাচি ও চিরুনি নিয়ে একযুগ ধরে দোগনা বাজারের একমাত্র নর সুন্দর হিসেবে চুল কেটে যাচ্ছেন তিনি। মানুষিক ভারসাম্যহীন স¦ামী বিশ্বনাথ শীলে ২০১২ সালে নিরুদ্দেশ হওয়ার পর একটি খুপড়ি ঘরে ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে নাপিতের কাজ কেরই মানবেতর জীবনযাপন করছেন এবং কোনমতে তাদের লেখাপড়া ও সংসার চালাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পশ্চিম ছিটকী গ্রামের দরিদ্র যাদব শীলের চতুর্থ সন্তান শেফালি শীল। নরসুন্দর পেশায় সম্ভবত তিনিই দেশের প্রথম নারী। বলতলা গ্রামের দোগনা বাজারের একমাত্র নরসুন্দর তিনি। পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে ৫ম শ্রেণির বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিবারের চাপে ৩৫ বছর পূর্বে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার আতরআলী গ্রামের পান-সিগারেট বিক্রেতা দরিদ্র বিশ্বনাথ শীলের সঙ্গে ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। জীবনকে বুঝে উঠার আগেই ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের মা হন তিনি। শেফালির সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, একযুগ আগেই আমার নরসুন্দরের কাজ শুরু। বিবাহিত জীবনে কখনই শান্তি ছিল না। একদিকে দারিদ্র্য, অবহেলা ও স্বামীর বেপরোয়া উদাসী জীবনযাপনের কারণে সংসার বিষময় হয়ে ওঠে। স্বামীর বাড়ি থেকে সন্তানদের নিয়ে পিতার বাড়িতে চলে আসি। কিছুদিন পরে পিতার বাড়ি থেকে বলতলা গ্রামের দোগনা বাজারে চলে আসি। দোগনা বাজারে তখন স্বামী নরসুন্দরের কাজ করতেন। তার এ কাজে মাঝে মাঝে আমি সহযোগিতা করতাম। কিন্তু ২০১২ সালে তার স্বামী অসুুস্থ হয়ে পড়েন। অভাবের কারণে ভালো চিকিৎসা করাতে না পারায় একসময় তার স্বামী মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থার কিছুদিনের মধ্যে তার স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যান। বহু খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান মেলেনি। ফলে ৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের দায়িত্বভার পুরোটাই শেফালিকে নিতে হয়। শেফালি শীল আরো জানান, স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার পর প্রথমে তিনি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন। তাতে সংসার যখন চলছিল না। তখন পুরোপুরি চুল কাটার পেশা বেছে নেন তিনি। তবে গ্রামের বাজারে চুল কাটতে শুরু করলে কিছু লোক ভালো চোখে দেখেনি। মেয়ে মানুষ পুরুষ মানুষের চুল কাটছে দেখে অসহযোগিতা ও হাসি-ঠাট্টা করত। অনেকে সমালোচনাও করত। আবার কিছু লোক অভাব দেখে তাকে সহযোগিতাও করেছে। তারা নিজেরা টাকা তুলে চুল কাটার জন্য তাকে একটি চেয়ারও কিনে দিয়েছিল। শেফালি বলেন, তাঁর ৫ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে তপতি রানী ও মেঝ মেয়ে বিথী রানী বিএ পাস এবং বিবাহিত, ছেলে এইচএসসি পড়ে, সেজ মেয়ে মালা ১০ম ও ছোট মেয়ে সাগরিকা ৯ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। শৌলজালিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ মাহমুদ হোসেন রিপন জানান, শেফালী রাণী শীলের ব্যাপারে তারা সবাই আন্তরিক। তার সার্বিক সহযোগীতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করে যাবে। পরিষদের সকল সুযোগ সুবিধায় তাকে অগ্রাধিকার নেয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জমি ও ঘর দ্রুত নির্মান করে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
from BDJAHAN https://ift.tt/2J5wbMo
via IFTTT