ফেসবুকে স্ত্রীকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে তরুণ চিকিৎসকের আত্মহত্যা
চট্রগ্রাম প্রতিনিধি : ফেসবুকে স্ত্রীকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস ও ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক তরুণ শিক্ষক চিকিৎসক। ভালোবাসার আবেগ জড়িয়ে, স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে এবং স্ত্রীকে দায়ী করে আত্মহত্যা করেছেন এ তরুণ চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশ (৩৩)। তিনি চট্টগ্রামের তরুণ ডাক্তারদের জনপ্রিয় কোচিং সেন্টার ‘থ্রি ডক্টরস’-এর অন্যতম উদ্যোক্তাও। বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) ভোর ৫টার দিকে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার নিজ বাসায় এই তরুণ আত্মহত্যা করে বলে জানা গেছে। নিহতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সঞ্জয় শুভ্র আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আত্মহত্যার পূর্বে ভোর ৪টা ৫২ মিনিটে স্ত্রীর সাথে একটি ছবি শেয়ার করে ‘ভালো থেকো আমার ভালোবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে’ এই এক লাইনের সর্বশেষ স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে। ৪টা ২৬ মিনিটে স্ত্রীর আরো কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি শেয়ার করে এবং স্ত্রীর অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে নিজে আত্মহত্যা করার ঘোষণা দেন আকাশ।
ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের মায়ের আহাজারি। তাদের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসা থেকে ছবিটি তুলেছেন অনুপম বড়ুয়া।
জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্নকারী ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ চট্টগ্রামের তরুণ ডাক্তারদের জনপ্রিয় কোচিং সেন্টার ‘থ্রি ডক্টরস’-এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। একজন জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে।
তার ফেসবুকে দেয়া সর্বশেষ স্ট্যাটাস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে তানজিলা হক মিতু নামের একজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার। ২০১৬ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের আগে-পরে অন্য তরুণের সাথে মিতুর সম্পর্ক থাকার বিষয়ে দু’জনের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসার পরও দীর্ঘ প্রচেষ্টায় স্ত্রীকে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে আকাশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলে সর্বশেষ স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে তার মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রীকেই দায়ী করে আকাশ বলেছেন, ‘তাকে আমি ১০০% ভালোবেসেছি।’
মৃত্যুর আগে স্ত্রীকে জড়িয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো: ‘আমার সাথে তানজিলা হক চৌধূরী মিতুর ২০০৯ সাল থেকে পরিচয়, প্রচণ্ড ভালোবাসি ওকে। ও নিজেও আমাকে অনেক ভালোবাসে আমরা ঘুরে বেড়াই, প্রেম করে বেড়াই আমাদের ভালোবাসা কম-বেশি সবাই জানে। অনেকে বউ পাগলাও ডাকত। ২০১৬তে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েকদিন আগে জানতে পারি কিছুদিন আগে শোভন নামে চুয়েটের ০৮ ব্যচের এক ছেলের সাথে ও হোটেলে রাত কাটায়। আর কত কি লজ্জা লাগছে সব লিখতে। ততদিনে সবাইকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া শেষ। আমাকে যেহেতু চট্টগ্রামের সবাই চিনে তাই বিয়ে কেনসেল করতে পারিনি লজ্জাতে। ওর মোবাইলে দেখি, ভাইবারে দেখতে পাই মাহবুব নামে কুমিল্লা মেডিকেলের ব্যাচম্যাটের সাথে হোটেলে শত শত ছবি। আমিতো বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে গেলাম। তারপর ক্ষমা চাইল শবে কদরের রাতে কান্না করে পা ধরে আর কখনো এমন হবে না। আমিও ক্ষমা করে দিয়ে ১ বছর ভালোভাবেই সংসার করলাম। তারপর ও দেশের বাইরে আমেরিকা গেল। মাঝখানে একবার ঈদ পালন করতে আসল। সেপ্টেম্বরে ২০১৮ আবার চলে গেল ইউএসএ। ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ আমার ইউএসএ যাওয়ার কথা। জানুয়ারি ২০১৯ জানতে পারি ও রেগুলার ক্লাবে যাচ্ছে, মদ খাচ্ছে, প্যাটেল নামে এক ছেলের সাথে রাত কাটাচ্ছে। আমি বারবার বলছি আমাকে ভালো না লাগলে ছেড়ে দাও কিন্তু চিট করো না, মিথ্যা বলো না। আমার ভালোবাসা সবসময় ওর জন্য ১০০% ছিল। আমি আর সহ্য করতে পারিনি।আমাদের দেশেতো ভালোবাসায় চিটিং-এর শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম আর আমি চিরশান্তির পথ বেছে নিলাম। তোমাদেরও বলছি কাউকে আর ভালো না লাগলে সুন্দরভাবে আলাদা হয়ে যাও, চিট করো না, মিথ্যা বলো না। আমি জানি অনেকে বিশ্বাস করবে না। এত অমায়িক মেয়ে, আমিও এসব দেখে ভালোবেসেছিলাম। ভিতর-বাহির যদি এক হতো। সবাই আমার দোষ দিবে সবকিছুর জন্য। তাই ব্যাখ্যা করলাম। আমার শাশুড়ি এর জন্য দায়ী এসবের জন্য। মেয়েকে আধুনিক বানাচ্ছে। একটু বেশি বানিয়ে ফেলেছে। উনি চাইলে এখনো সমাধান হতো। ও মা তুমি মাফ করে দিও। তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না। মায়ের ভালোবাসার কখনো তুলনা চলে না। বারবার বলছি ভালো না লাগলে আলাদা হয়ে যাও, চিট করো না, মিথ্যা বলো না, বিশ্বাস ভাঙ্গিও না। হাজার হাজার ছবি আছে আরো খারাপ খারাপ দিলাম না। যারা বিলিভ করবে এতেই করবে, না করলে নাই। এই ৯ বছরে বয়ফ্রেন্ড, স্বামী-স্ত্রীর মতো আমার সাথে সবই করে গেল। ও আমাকে আর কি ভালোবাসল? কিসের বিয়ে করল? আমি শেষ পর্যন্ত চাইছি সব চুপ রেখে সমাধান করে অকে নিয়ে থাকতে। আমার শ্বশুর আর শাশুড়িকে বারবার বলেছি। উনারা সমাধান করতে পারতেন। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার বউ। ৯টা বছর যাকে ১০০% ভালোবাসছি, ওকে প্ররোচনা দিছে মইন মিথি নামে দুই ফ্রেন্ড। ওর মা-বাবা আমাকে মানসিক কষ্ট দিয়ে মারছে। আমি এই বেঈমানি মেনে নিতে পারি নাই। তারপরও ভুলে আমি সুন্দর সংসার করতে চাইছি। আমার শাশুড়ি-শ্বশুর আর বউ নামের কলংক করতে দিল না আমাকে। প্রতিনিয়ত প্রেশার দিয়ে গেছে। আমার বউ আমার মায়ের নামে যা তা বলে গেছে। আমাকে ভালো না লাগলে ছেড়ে চলে যেতে বলেছি ১০০ বার। আমি বোকা ছিলাম তুমি সুখে থেকো। অনেকে ওর ফ্যান বিলিভ করবে না। আমিও জানি তবে এটাই সঠিক মরার আগে কেউ মিথ্যা বলে না আর বাইরে থেকে মানুষের ভিতরের চেহারা বুঝা যায় না। ও সুন্দরী, পড়ায় ভালো, গান পারে সত্য কিন্তু ও ভালো অভিনেত্রী, ভালো চিটার। যাদের ঈচ্ছা বিলিভ করবে যাদের ঈচ্ছা নাই করবে না। তবে কাউকে ভালোবেসে চিটারগিরি করো না।‘
নিহত আকাশের লাশ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। এই তরুণ চিকিৎসকের মৃত্যুতে বন্ধুমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার স্ত্রী তানজিলা হক মিতু বর্তমানে কোথায় আছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের ফেসবুক লিংক: http://bit.ly/2UzjQTz
from BDJAHAN http://bit.ly/2DNa6j6
via IFTTT