প্রথমবারের মতো ভোটের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিটমহলের বাসিন্দারা
লালমনিরহাট প্রতিনিধি : এবারেই প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কোন নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছে লালমনিরহাটের বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা। সরকার গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজেদের মতামত দেয়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারা। সেই সাথে তাদের প্রত্যাশা, যে প্রার্থী বিজয়ী হবেন তিনি যেন তাদের দীর্ঘ বঞ্চনার অবসান ঘটাতে ভূমিকা রাখেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে তারা কোনও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময় কার্যকর হওয়ার মধ্য প্রায় ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের অবরুদ্ধতার অবসান ঘটে। মিলেছে রাষ্ট্র ও নাগরিক পরিচয়। দেশের মানচিত্রের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়ার পর একবার স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পেলেও এবারই প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন এসব অঞ্চলের অধিবাসীরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উৎসাহ ও উত্তেজনা কাজ করছে। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে ১৪ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। এই নিয়ে বইছে উচ্ছাস। সাবেক ছিটমহলগুলোর দোকানে, হাটে-বাজারে এখন ভোট নিয়ে আলোচনা আর জল্পনা-কল্পনা। কুড়িগ্রামের তিন উপজেলায় মোট ছিটমহল ১২টি। এরমধ্যে ফুলবাড়ি উপজেলার অংশ হয়ে যাওয়া দাসিয়ারছড়া বাংলাদেশে অবস্থিত ‘ভারতীয় বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর মধ্যে আয়তন এবং লোকসংখ্যায় সবচেয়ে বড়। দীর্ঘ ৬৮ বছর অহিংস আন্দোলন সংগ্রামের বিনিময়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা বলছেন, তারা এমন প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে চান, যারা পিছিয়ে থাকা এই এলাকার নানামুখী সংকট দূর করতে ভূমিকা রাখবে। নিশ্চিত করবে উন্নয়ন। তবে দাবিদাওয়া ও প্রত্যাশার চাইতে এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রথমবারের মতো কোন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে ভোট দিতে পারার আনন্দ। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দাসিয়ারছড়ায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ১৭২ জন। পুরুষ ভোটার ১ হাজার ৫৯০ জন ও নারী ভোটার ১ হাজার ৮২ জন। এবার তারা পাঁচটি ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটকেন্দ্র গুলো হলো- ফুলবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম কুটি চন্দ্রখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চন্দ্রখান উচ্চ বিদ্যালয়, চন্দ্রখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের আটিয়াবাড়ী ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাশীপুর ইউনিয়নের ছড়ারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মূলত ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর হওয়ায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে ছিটমহল। এর ফলে ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর আয়তনের ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়। এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি , সদর (লোকালয় হীন) ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় ১ হাজার ৮৮০ দশমিক ৪৪ একর আয়তনের মোট ১২টি ছিটমহল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৫ সালে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ গণনা অনুযায়ী এসব বিলুপ্ত ছিটমহলের মোট জনসংখ্যা ৩৭ হাজার ৫৩৫ জন। এর মধ্যে দাসিয়ারছড়ায় ৬ হাজার ৮৮৯ জন লোকের বসবাস রয়েছে, তাদের মধ্যে ৩ হাজার ১৭২ জন ভোটার। দাশিয়ারছড়ার অধিবাসীদের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার ফুলবাড়ি, কাশীপুর এবং ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
from BDJAHAN http://bit.ly/2ESAB7s
via IFTTT