ইতিহাস গড়ে বাইডেনের জয়
অনলাইন ডেস্ক : ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হলেন জো বাইডেন। টানটান উত্তেজনার ভোটযুদ্ধ শেষে অবশেষে তিনিই অতিক্রম করেন জয়ের সেই ম্যাজিক ফিগার ২৭০। ভোটের দৌড়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে রেখে ২৯০ ইলেক্টোরাল ভোটে হোয়াইট হাউস নিজের করে নিলেন দুইবারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এদিকে ট্রাম্প পড়ে রয়েছেন ২১৪ ইলেক্টোরাল ভোটেই।
প্রবীণ রাজনীতিক বাইডেনের এই জয় ইতিহাস। সবচেয়ে বেশি বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস এখন তার দখলেই। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পাওয়ার ইতিহাসও এখন ৭৭ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট রাজনীতিকের দখলে।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জো বাইডেন ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ২৯০টি পেয়েছেন বলে জানায় দ্য গার্ডিয়ান। তবে এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। সিএনএন বলছে, বাইডেন পেয়েছেন ২৭৩ ইলেক্টোরাল ভোট। একই সময়ে নিউইয়র্ক টাইমস দেয় ২৭৯টি এবং ওয়াশিংটন পোস্ট দেখায় ২৭৩টি। ওই সময় আল জাজিরা বাইডেনের ইলেক্টোরাল ভোট দেখায় ২৯০টি এবং বিবিসি ও রয়টার্স ২৭৩টি।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, নেভাদার ৬ ও পেনসিলভানিয়ার ২০ ইলেক্টোরাল ভোট পাওয়ার মধ্য দিয়ে বাইডেনের মোট ইলেক্টোরাল ভোট ২৯০ এ পৌঁছে। আগে থেকেই তার পকেটে ছিল ২৬৪ ইলেক্টোরাল ভোট।
কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল বাকি ছিল বেশ লম্বা সময়। অঙ্গরাজ্যগুলো হলো, জর্জিয়া, নেভাদা, পেনসিলভেনিয়া, অ্যারিজোনা ও নর্থ ক্যারোলিনা। এরমধ্যে শুধু নেভাদা বা বাকি চারটি অঙ্গরাজ্যের যেকোনো একটিতে জয় পেলেই হোয়াইট হাউস দৌড়ে সফল হওয়ার কথা ছিল জো বাইডেনের। অবশ্য তার সে পথ খুব কঠিন নয় বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায় আগেই। নেভাদা ও অ্যারিজোনায় এগিয়ে ছিলেন তিনি। পরে এগিয়ে যান জর্জিয়ায়ও। এরপর ‘রিপাবলিকান ঘাঁটি’ পেনসিলভেনিয়াতেও এগিয়ে যান বাইডেন।
ভোটের পর যত সময় যাচ্ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় তত কঠিন হয়ে উঠছিল। আবারও হোয়াইট হাউসে যেতে পেনসিলভানিয়া এবং সঙ্গে বাকি চারটি অঙ্গরাজ্যের তিনটিতে জয় দরকার ছিল ট্রাম্পের। তার সেই আশা আশাই থেকে গেল। ১৯৯২ সালে জর্জ এইচডব্লিউ বুশের পর কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে না পারার রেকর্ড এখন তার কাঁধেই ঝুলল।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মতে, জর্জিয়া (১৬ ইলেক্টোরাল ভোট), নেভাদা (ছয় ইলেক্টোরাল ভোট), অ্যারিজোনা (১১ ইলেক্টোরাল ভোট) ও পেনসিলভেনিয়া (২০ ইলেক্টোরাল ভোট)- এই চার রাজ্যে দুই প্রার্থীর ভাগ্য ঝুলছিল। তবে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের চোখ ছিল নর্থ ক্যারোলিনার ১৫টি ইলেক্টোরাল ভোটের দিকেও।
এর আগে জো বাইডেন জয়ের খুব কাছে চলে আসেন পেনসিলভেনিয়া ও জর্জিয়ায় নিজের অধিপত্য বিস্তার করে। অঙ্গরাজ্য দুটিতে শুরু থেকে এগিয়ে থাকা ট্রাম্পকে টপকে নিজেকে এগিয়ে নেন তিনি, যা পড়ে হয়ে ওঠে হোয়াইট হাউস জয়ের মূল চাবি। অবশ্য বাইডেন হোয়াইট হাউস জয়ে মাত্র ছয় ভোট দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যার ভরসা ছিল ছয় ইলেক্টোরাল ভোটের নেভাদা।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, জর্জিয়ায় শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু শুক্রবার সেখানে আবারও ভোটগণনা শুরু হলে দ্রুতই নিজের লিড হারাতে থাকেন ট্রাম্প। আবার শেষ দিকে এসে পেছনে পড়তে থাকেন পেনসিলভেনিয়াতেও।
জো বাইডেন এগিয়ে ছিলেন ২৬৪ ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প পিছিয়ে ছিলেন ২১৪ ভোট নিয়ে।
কে এই জো বাইডেন?
জো বাইডেনের পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। জো বাইডেন নামেই তিনি পরিচিত। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দুই মেয়াদে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেলাওয়ার থেকে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর। পেনসিলভেনিয়ার স্ক্রানটনে। স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারে তার বেড়ে ওঠা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। ১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তার। এরপর ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক ভিডিওবার্তায় ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রাইমারিতে লড়াইয়ের আভাস দেন বাইডেন।