রাজাপুরের রিনা হাটতে গেলেই ব্যথায় চিৎকার করেন, প্রয়োজন একটি কৃত্রিম পা!

রাজাপুর প্রতিনিধি : শিশুকালে বাবার সঙ্গে খুলনায় থাকায় রেললাইনে বসে খেলার সময় ট্রেনের হর্ন শুনতে না পেরে ডান হাত ও পা হারাতে হয়েছে রিনাকে। সমাজের কিছু মানবিক মানুষের সহযোগিতায় থাকার ঘর পেয়েছেন হাত-পা হারানো বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রিনা আক্তার। পেয়েছিলেন একটি কৃত্রিম পা। দেড়বছর ধরে ব্যবহার করায় এখন সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। হাটতে গেলেই প্রচন্ড ব্যথা লাগে পায়ে। কয়েকটি স্থানে কালো দাগও হয়েছে। কৃত্রিম পায়ের জন্য এখন হাটতে গেলেই প্রচন্ড ব্যথায় চিৎকার করেন রিনা। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালী গ্রামে রিনার পৈত্রিক বাড়ি। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানাগেছে, রিনার বাবা মোজাম্মেল হক তখন খুলনা জুট মিলে দারোয়ানের চাকরি করতেন। সেখানেই দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। বাবার সঙ্গে খুলনায় থাকায় শিশুকালে রেললাইনে বসে খেলার সময় বাক ও শ্রবণ প্রতবিন্ধী হওয়ায় ট্রেনের হর্ন শুনতে না পাওয়ায় রিনাকে ডান হাত ও পা হারাতে হয়েছে। ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান রিনা। এরপর দুই মেয়েকে নিয়ে খুলনা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তাদের মা জয়নব বিবি। নতুন করে বসবাস শুরু করেন এখানে। সেখানে একটি খুপড়ি ঘরে কোনোমতে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন তারা। মায়ের ভিক্ষা ও প্রতিবেশীদের সাহায্যে চলতো তাদের সংসার। কিছুদিন পর তার মা জয়নব বিবিও মারা যান। এতিম হয়ে যান বড় বোন শিরিন বেগম ও রিনা। এরপর সেই খুপড়ি ঘরেই অর্ধাহারে অনাহারে তাদের বসবাস শুরু। ঝড় বৃষ্টি এলেই পানিতে ভরে যেত তাদের ছোট ঘরটি। নিরুপায় হয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হতো দুই বোনকে। স্থানীয় কলেজছাত্র মেহেদি হাসান রিনা আক্তারের এ দুর্দশা দেখে পুটিয়াখালীর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ শাহাদাতকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন লোকদের সঙ্গে আলাপ করেন তাদের জন্য কিছু করার। এ বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রচারের ব্যবস্থা করেন তারা। সহায়তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬ হাজার টাকা ও দুই বান ঢেউ টিন দেয়া হয় তাদের। মেরামত করা হয় তাদের সেই ঘরটি। এছাড়াও সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের আর্থিক সহায়তা ও শ্রম দিয়ে একটি তহবিল গঠন করেন। স্থানীয় অনেকেই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে। সবার সহযোগিতায় আলোর মুখ দেখেন তারা। একটি কৃত্রিম পা দেড়বছর ধরে ব্যবহার করায় এখন সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে পায়ের কয়েকটি স্থানে কালো দাগও হয়েছে। হাটতে গেলেই কৃত্রিম পায়ের জন্য এখন প্রচন্ড ব্যথায় চিৎকার করেন রিনা। প্রতিবেশীরা জানান, রিনার বাড়ি থেকে কোনো শব্দ পাই না আমরা। মাঝে মাঝে শুধু কান্নার শব্দ আসে। কথা বলতে পারে না, কিছু শুনে না, চলাফেরা করে অনেক কষ্টে। অনেক কষ্ট করে বেঁচে আছে মেয়েটা। তারপরেও রিনার কাছে অনুভূতি জানতে যাওয়ার চেষ্টা করলে ইশারায় মাথা নেড়ে এ প্রতিবেদককে বোঝান, তিনি এখন ভালো নেই। কৃত্রিম পা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চলাচলে অনেক কষ্টে আছেন। সেই সাথে পায়ের দাগগুলোও দেখান তিনি। ইউপি সদস্য মো. ফারুক মোলা জানান, এতিম রিনা মেয়েটা অনেক ভালো। মেয়েটা একদিকে বাক প্রতিবন্ধী এবং অপরদিকে ডান হাত-পা নেই। খুব অসহায় অবস্থায় আছে। তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হচ্ছে। ভাতা হিসেবে যে কয় টাকা পায় তাতে খাবার খরচই চলে না। স্থানীয় মেহেদী হাসান ও সৈয়দ শাহাদাত উদ্যোগ নিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে টাকা তুলে টিনের একটি ঘর তুলে দিয়েছে। কিন্তু এখন একটি কৃত্রিম পায়ের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে মেয়েটাকে।

Next Post Previous Post