গাইবান্ধায় করোনা আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়ালো ৮০০
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় বেড়েই চলছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিনই সংক্রমণ বাড়লেও সচেতনতার বালাই নেই। বরং স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে নগর-বন্দর আর হাটে-বাজারে মানুষ বেপরোয়া চলাফেরা করছে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে প্রশাসনের তৎপরতা শিথিল আর সাধারণ মানুষের উদাসীনতায় বাড়ছে সংক্রমণ।
গাইবান্ধার সর্বত্র করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কি গ্রাম, কি শহর সবদিকেই করোনার ছোবল। সর্বশেষ শনিবার রাতে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ১৬ আগস্ট রবিবার পর্যন্ত জেলার ৭ উপজেলায় ৮০৪ জনের শরীরে ধরা পড়েছে করোনা। মারা গেছেন ১৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৭৮ জন। বিভিন্ন আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন ৩১২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার। এ উপজেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৫৫ জন। মারা গেছেন ৪ জন।
সর্বশেষ শনিবার রাতে পাওয়া রিপোর্টে এ জেলায় নতুন করে আরও ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে সদরে ২ জন, সাদুল্লাপুরে ৪ জন, ফুলছড়িতে ১ জন, পলাশবাড়ীতে ১ জন এবং সাঘাটা উপজেলায় ১ জন রয়েছেন।
সংখ্যাধিক্য অনুযায়ি রবিবার সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাতেই সবচেয়ে বেশি ২৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে (এরমধ্যে পৌর এলাকায় ১৩৪ জন)। এর পরের অবস্থানে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় পাওয়া গেছে ২২৭ জন (এরমধ্যে পৌর এলাকায় ১৬৯ জন), পলাশবাড়ী উপজেলায় ৮৪ জন (এরমধ্যে পৌর এলাকায় ৫৪ জন), সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৬২ জন (এরমধ্যে পৌর এলাকায় ২৯ জন), সাদুল্লাপুর উপজেলায় ৭২ জন, সাঘাটা উপজেলায় ৬২ জন ও ফুলছড়ি উপজেলায় ৪২ জন।
তবে করোনার সংক্রমণের মধ্যেই আশার আলো এর সুস্থতার সংখ্যা। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এ পর্যন্ত জেলায় ৪৭৮ জন মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন ওই রোগ থেকে। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদরে ৯৫ জন, সুন্দরগঞ্জে ৩৫ জন, সাদুল্লাপুরে ৪৬ জন, গোবিন্দগঞ্জে ১৯৯ জন, সাঘাটায় ৩২ জন, পলাশবড়ীতে ৫২ জন ও ফুলছড়িতে ১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গাইবান্ধায় বর্তমানে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন ৩১২ জনের মধ্যে ১২৯ জন গাইবান্ধা সদরে, সুন্দরগঞ্জে ২৬ জন, সাদুল্লাপুরে ২৪ জন, গোবিন্দগঞ্জে ৫২ জন, সাঘাটায় ৩০ জন, পলাশবাড়ীতে ২৮ জন ও ফুলছড়িতে ২৩ জন রয়েছেন।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ১৪ জন করোনা আক্রান্তরোগী মারা গেছেন। এরমধ্যে গোবিন্দগঞ্জে ৪ জন, সদরে ৩ জন, সাদুল্লাপুরে ২ জন, পলাশবাড়ীতে ৪ জন এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় আরও ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে করোনা সংক্রমণ নিয়ে স্থানীয়রা অনেকটাই অসচেতন। চলাচলে অসতর্কতা এবং সামাজিক দূরত্ব ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি কেউ সঠিকভাবে মেনে চলছেন না। সাধারণ মানুষ হাঁটবাজার, দোকানপাট ও রাস্তাঘাটে অবাধে চলাচল করছেন। চলছে চায়ের দোকানে আড্ডা। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে কমেছে প্রশাসনের নজরদারিও। এতে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা।
সিভিল সার্জন জানান, বর্তমানে জেলায় মোট ৩১২ জন কোভিড-১৯ রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল ও নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদরের রোগীই বেশি। এছাড়া জেলার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সুন্দরগঞ্জ এবং গাইবান্ধা পৌর শহর ও আশেপাশের এলাকায় করোনা সংক্রামণ ক্রমাগত বাড়ছে। এ পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত ৮০৪ জনের মধ্যে এই চার পৌর এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যা ৩৮৬ জন। এরমধ্যে গাইবান্ধা পৌরসভায় সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত ১৬৯ জন।
সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, পজেটিভ কেসগুলোর অধিকাংশই এখন সুস্থ হওয়ার পথে। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কারও মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত তাঁকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। আইসোলেশনে নিতে হবে।