লন্ডনী পাড়ায় আছে বিলাসবহুল বাড়ি আছে, নেই বাড়িওয়ালা
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : বিলাস বহুল বাড়ি পড়ে আছে। বাড়ির ভিতরে আসবাবপত্রও বেশ দামি দামি। এক একটি বাড়ি নির্মানে ব্যয় করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু সব কিছুই পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। বাড়ি থাকলেও সেখানে নেই বাড়িওয়ালা কিংবা তাদের লোকজন। এই হচ্ছে লন্ডনীপাড়া খ্যাত নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ও কুর্শি ইউনিয়ের নয়মৌজা।
নয়মৌজা ঘুরে এসে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেলো এই অবস্থা। লন্ডনী পাড়ায় প্রবাসীদের মধ্যে প্রতিযোগীতা হয়। তবে এই প্রতিযোগীতাটি সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। কোনো এক প্রবাসী বাড়ি নির্মাণে ১ কোটি টাকা ব্যয় করলে অপর প্রবাসী তিনগুন বেশি খরচ করে বাড়ি নির্মান করেন। বাড়ি নিয়ে প্রতিযোগীতার এই বিষয়টি হাস্যকর মনে হলেও এই অবস্থার প্রমান মিলেছে শ’য়ে শ’য়ে।
স্থানীয়রা জানান, ৯টি গ্রামের নাম কে কেন্দ্র করে নয়মৌজার নামকরণ করা হয়। গ্রামগুলো লডুবা, বোরহানপুর, সাবাজপুর, রাইয়াপুর, তাহিরপুর, কল্যানপুর, মানিক পুর, কাদমা, পরিজনকাদিরপুর সাদুল্লাপুর ওই গ্রামগুলো নিয়ে প্রচলিত নৌমৌজা। এদের অধিকাংশই প্রবাসী অধ্যুষিত। নয়মৌজার প্রত্যক গ্রামের লোকজন রয়েছেন লন্ডন,আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে ওই এলাকার লোকদের অবস্থান। দেশে ও বিদেশে রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ী।
জন্মস্থানে বিশালবহুল বাড়ী তৈরি করলে সেখানে থাকার কোন মানুষ নেই। কারো বাড়ীতে থাকে পোঁকা মাকড় আবার বাড়ী দেখাশুনা করার জন্য রেখেছেন কেয়ারটেকার।
কেয়ারটেকার থাকা খাওয়া ব্যবস্থা করে দিতে হয় তাদের। অনেক প্রবাসী ,সখ করে বাগান বাড়ী,রাজবাড়ী,কাজি বাড়ী, হাওয়া ভবন, পুকুরবাড়ী, ছায়ানীড়, স্বপ্ন হাউজ, নীল ছায়া, এসব নামকরণ করে বিশাল বহুল অট্রালিকা তৈরি করে রেখেছেন।
প্রবাসীরা দেশে আসলে কয়েকদিন থাকেন আবার চলে গেলে তালাবদ্ধ কিংবা কেয়ারটেকার নিয়োগ করে চলে যান। বাড়িগুলো দেখত অনেক সুন্দর ও দর্শনার্থীদের আর্কষণ করতে বাড়ীর চারপাশে লাগানো রয়েছে নানা ধরনের রঙ্গিন বাতি,সহ সৌন্দর্য্য বাড়তে বিভিন্ন রকমের বাড়তি কাজ করেছেন তারা। প্রবাসীরা ওই স্থানে প্রতিযোগিতা করে বাড়ি তৈরি করেন বলে জানা গেছে। এই বাড়ী গুলো তৈরী করতে ব্যায় হয়েছে কোটি কোটি টাকা। সর্বনিম্ন ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে ৫ কোটি টাকা। এমন তথ্যই জানিয়েছেন ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল হান্নানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, লন্ডন থাকা অবস্থায় তার গুলশান হোটেলে সিঙ্গাপুরের দুই শিক্ষার্থী তার রেস্টুরেন্টে সপ্তাহে তিন দিন কাজ করত। তাদের সুবাদে সিঙ্গাপুরের এই দুই শিক্ষার্থীর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের আমন্ত্রণে আব্দুল হান্নান সিঙ্গাপুর গেলে একটি বিলাস বহুল রাজবাড়ী দেখতে পাই। তখন থেকে একটি রাজবাড়ী করার স্বপ্ন আমার হৃদয়ে জাগে। আমি দেশে এসেই রাজবাড়ী তৈরি করার চেষ্টা করি।
বিগত ২০০৮ সনের এপ্রিল মাস থেকে আমার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে রাজবাড়ী কাজ করার শুরু করি। একযুগে ধরে এখন ও রাজবাড়ীর কাজ শেষ হয়নি। রাজবাড়ির কাজ শেষ হতে আর তিন বছর লেগে যাবে বলে তিনি জানান। রাজবাড়ীর কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে আব্দুল হান্নান মিয়া জানান। রাজবাড়ীর পাশেই একই গ্রামে নান্দনিক আরেকটি বাগান বাড়ী রয়েছে।
বোরহানপুর গ্রামের শিল্পপতি মেহবুব নুরুল ইসলাম ২০০০ সনে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অট্রালিকা বাড়ী নিমার্ণ করলে ও সেখানে থাকার কেউ নেই। মাঝে মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে দেশে আসলে কিছুদিন বসবাসকরে আবার লন্ডনে চলে যান। তবে এই বাড়ীর দেখা শুনার জন্য লোক তাকলে ও অবহেলা অযত্নে বাড়ীতে থাকা দামি দামি অসবাপত্র ও মূল্যবান জিনিষ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া ও কণ্যাণপুরে রয়েছে হাজি বাড়ী নামে আরেকটি দর্শনীয় বাগান বাড়ী।
নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দত্তগ্রামে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় বাড়ী। নবীগঞ্জ শহরের আক্রমপুর রয়েছে করগাঁও ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আলতাব আলীর আরেকটি বিলাস বহুল বাড়ী। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এসব অধিকাংশ বাড়ীই পড়ে আছে পরিত্যাক্ত ভাবে থাকার জন্য কোন লোক নেই।