সাঘাটার যমুনার চরে সবুজের সমারোহ : শষ্য ও সবজী চাষে কৃষকের ব্যস্ততা 

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা : যমুনার বুক চিরে জেগে ওঠা চরে সবুজের সমারোহে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। নদীতে পানি না থাকলে নদীভিক্তিক জীবিকা নির্বাহকারীরা চরাঞ্চলের বালু, পলি ও দো-আঁশ মাটিতে চাষাবাদ করে আলোর মুখ দেখছে। ফলে যমুনা নদী অববাহিকায় নতুন করে প্রাণের স্পন্দন ফিরে এসেছে। চরাঞ্চল জুড়ে সবুজের সমারোহে মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, গম, ভুট্টা, গাজর, মরিচ, বেগুন, পিঁয়াজ, রসুন, কলা, বাদাম, চিনা আলু, টমেটো, ঢেঁড়স, ডালসহ নানা জাতের ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। যমুনার বালুচরে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন চরাঞ্চলের হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ। চরাঞ্চলের উৎপাদিত মরিচ, বেগুন, ভুট্টা, বাদামসহ অন্যান্য ফসল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে।
চরের কৃষকরা জানান, সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে এসব ফসল চাষাবাদে তারা আরও আগ্রহী হবেন। এই এলাকায় ফসল সংরক্ষণাগার না থাকার কারণে তারা ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরাই লাভবান হচ্ছে বেশি। সবজি সংরক্ষণ হিমাগার না থাকা এবং উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দারস্থ হতে হচ্ছে কৃষকদের।
সাঘাটা উপজেলার যমুনা নদীদ্বারা বেষ্টিত পাতিলবাড়ী, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি, হাটবাড়ী, গুয়াবাড়ী, হলদিয়া, নলছিয়া, কালুরপাড়া, কুমারপাড়া, গোবিন্দি, কানাইপাড়াসহ বিভিন্ন চরে গত রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, খরস্রোতাসিনী যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে শুধুই সবুজের সমারোহ। চরের বালু, পলি ও দো-আঁশ মাটিতে চাষাবাদ হয়েছে পিঁয়াজ, রসুন, গম, ভুট্টা, স্বজ, আলু, বেগুন, কুমড়া, লাউসহ নানা জাতের ফসল। কৃষকরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষেতের পরিচর্যা করে। কৃষকরা আরও জানান, এক সময় দরিদ্রতার সাথে লড়াই করতো যমুনা চরের মানুষ। তখন এই অঞ্চলকে বলা হত মঙ্গাপীরিত এলাকা। চরের পুরুষরা শহরে অথবা অন্য কোন জেলায় গিয়ে দিন মজুরের কাজ করে পরিবারসহ জীবিকা নির্বাহ করতো। চরে চাষাবাদ শুরু হওয়ায় পাল্টে গেছে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা। চরের কোন মানুষকে আর জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য কোথাও গিয়ে আর দিনমজুরের কাজ করতে হয় না। প্রায় বিশেষত: মওসুমের বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। ফলে দরিদ্রতার সাথে লড়াই করা মানুষগুলো এখন স্বাবলম্বী।
চরচাষীরা আরও জানান, ৭ বছর আগেও তারা অভাবের সাথে লড়াই করেছেন। যমুনার চরে চাষাবাদ করে এখন তারা স্বাবলম্বী। চরের জমিতে তারা শ্রম দিয়ে নানা জাতের ফসলের চাষাবাদ করছেন। চরের জমি পতিযুক্ত হওয়ায় অল্প খরচে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারে কৃষক। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে আগেরমত কৃষকদের আর সমস্যা হয় না ফসল একটু বেশি হলেই জমি থেকেই পাইকাররা এসে নিয়ে যায়। এই এলাকায় ফসল সংরক্ষণাগার হলে কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে বলে কৃষকদের দাবি।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি অফিসার সাদেকুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় গম ৫৬০ হেক্টর, মরিচ ১৯০ হেক্টর, ভুট্টা ৬৫০ হেক্টর এবং সবজি ৪৫৫ হেক্টর চাষ করা ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এর সিংহভাগই চরে। এছাড়াও ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন জাতের ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। চর নিয়ে নানা পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে, আগামীতে যেন আরও উন্নত এবং বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারে কৃষক এজন্য এবার চরে গমের প্রদর্শনী করা হয়েছে।
Next Post Previous Post