চাকরির পেছনে না ছুটে যুব সমাজকে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

অনলাইন ডেস্ক : চাকরির পেছনে না ছুটে যুব সমাজকে মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার চায় এই মুজিব বর্ষে দেশে কেউ বেকার থাকবে না। শুধু চাকরির মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না। তরুণদের মাঝে যে সুপ্ত শক্তি রয়েছে- তার চিন্তা এবং মননকে বিকশিত করে সেই কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। যুব সমাজ নিজে কাজ করবে ও আরও দশ জনকে কাজের সুযোগ করে দেবে। খবর বাসসের।
বৃহস্পতিবার সকালে তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে (পিএমও) জাতীয় যুব পুরস্কার-২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ২২ জন আত্মকর্মী এবং পাঁচ যুব সংগঠনের মাঝে এই পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রদান করা এ পুরস্কারে এ পর্যন্ত ৪৪৫ জন আত্মকর্মী সম্মানিত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের অগ্রগতি’- এই স্লোগানে আমরা বিশ্বাস করি। কাজেই সেই লক্ষ্য নিয়েই যুব সমাজকে আরও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চাকরি না করে চাকরি দেব বা দিতে পারবো- সেই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সেই চিন্তা ও আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাবোধ থাকতে হবে। সেটা থাকলে আমারতো মনে হয় বাংলাদেশে আর কেউ বেকার থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মাথার মধ্যে একটা জিনিস ঢুকে আছে, চাকরি ছাড়া যেন আর কিছুই করা যায় না। অথচ ফ্রিলান্সিং কাজ করে মাসে ২ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত টাকা আয় করা যায়। ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রয়োজনে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এক একজন স্বাবলম্বী হচ্ছে। অনলাইনে কাজ করে এখন ঘরে বসেই মানুষ অনেক টাকা রোজগার করতে পারছে।
যুবকদের প্রশিক্ষণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই প্রশিক্ষণটা একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করতে চাই। সেলক্ষ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই যেকোনো একটা বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া শুরু হবে। যুবকদের প্রশিক্ষণ কেবল যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকেই নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সরকার ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি চালু করেছে, সারাদেশে ২৮০০ ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে, সব ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস চালু হয়েছে। এর সবই যুবকদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। আর একারণে বেসরকারি খাতকেও উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এ পর্যন্ত আমরা ২ কোটি যুবকের চাকরি এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। ‘স্টার্টআপ’ প্রোগাম শুরুর জন্য সরকার ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়েছে। যারা স্বপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোক্তা হবে তারাই এখান থেকে ঋণ পাবে। কাজ করতে পারবে। শুরু করলেই কিন্তু ব্যাপকভাবে কাজ করা যায়। আমাদের যুব সমাজকে আমি এটাই বলবো-যে বহুমুখী সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি এটার সদ্ব্যবহার করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার আদর্শ রয়েছে। তার সেই আরাধ্য কাজ সম্পন্ন করাটাই আমাদের লক্ষ্য। যে দেশের জন্য লাখো মানুষ রক্ত দিয়েছেন, সেই দেশ কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা এই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আজকের তরুণ সমাজই হবে সেই গড়ে তোলার কর্ণধার।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা রাখেন যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. আখতার হোসেন। যুব ও ক্রীড়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান কবির মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আত্মকর্মী হিসেবে দেশে প্রথম স্থান অধিকারকারী ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান এবং দেশের সেরা যুব সংগঠক (মহিলা) হিসেবে পুরস্কার লাভকারী পারভীন আক্তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আতিক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু প্রতিপালনের প্রশিক্ষণ এবং স্বল্পমূল্যে ঋণ নিয়ে এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ গড়ে তুলেছেন। যার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মূলধনের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ও বার্ষিক আয় এক কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

Next Post Previous Post