জাতির গৌরবের দিন আজ
স্টাফ রিপোর্টার : বীরের জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশের দিন আজ। আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও অহঙ্কারের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের। হানাদার পাকিস্তানি সেনারা যে অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে এ জাতির বুকে, হাতের সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে একাত্তর সালের এই দিনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর নেতাদের সামনে। আজ সেই রক্তনদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র বিজয় দিবসের ৪৮তম বার্ষিকী। বিজয়ের গৌরবের বাঁধভাঙা আনন্দের দিন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তর সালের এ দিন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে জাতি মুক্তির সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। সে দিন জাতি নির্ভয়ে গেয়ে উঠেছিল বিজয়ের অবিনাশী গান। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর এ জাতির অহঙ্কারের বিজয় দিবস। কৃতজ্ঞ জাতি আজ দিনভর বর্ণাঢ্য আয়োজনে সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার গস্নানি মোচনে একাত্তর সালে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। নতচিত্তে স্মরণ করবে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া শহীদদের। পাশাপাশি ঘৃণা প্রকাশ করবে একাত্তরের নরঘাতকদের প্রতি।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। আজ ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সব স্তরের জনতার ঢল নামবে। শ্রদ্ধার সঙ্গে তারা শহীদদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার এবং এতিমখানাগুলোয় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে এবং বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। আজ সরকারি ছুটির দিন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং অগণিত মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। রাজধানী ছাড়াও সারা দেশেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবে বিজয় উৎসবে। বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করবে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১৯৭১ সালে চূড়ান্ত বিজয় এলেও বাঙালির এ সংগ্রাম শুরু হয়েছিল আরো অনেক আগে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আত্মচেতনায় দৃপ্ত দেশবাসী অগ্রবর্তী হয়েছিল স্বাধিকারের আন্দোলনে। সেই আন্দোলনের পরিণতি গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ১৯৬৯-এর গণঅভু্যত্থান। উত্তাল সারা বাংলা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকরা সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে রক্তের বন্যায় বাঙালিদের ভাসিয়ে দেয়ার ঘৃণ্য নীলনকশায় মেতে ওঠে। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে বাঙালিদের ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বললেন। বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’
পাকিস্তানি হানাদাররা ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যায় মেতে ওঠে। দেশমাতৃকার বীর সন্তানরা সামান্য অস্ত্রপাতি আর বুকভরা সাহস নিয়ে পৃথিবীর দুর্ধর্ষ বাহিনীর হামলা ঠেকাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে।
জাতি আজ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছে স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান পুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’ বাঙালির স্বাধীন স্বদেশের এ দিশা দিয়ে তিনি ঘুম জাগানিয়া গান শুনিয়ে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন সমগ্র জাতিকে। সুদীর্ঘ দুই যুগের নিরবচ্ছিন্ন স্বাধিকার আন্দোলনের মাহেন্দ্রক্ষণে শুনিয়েছিলেন মুক্তির গান, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’