সুন্দরগঞ্জে আবার তিস্তার ভাঙন ও পানি বৃদ্ধি
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা প্রতিনিধি : বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার আবারও ভাঙন ও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নিচু এলাকা। যার কারণে নিচু এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গৃহপালিত পশু পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলবাসি। এদিকে বিশেষ করে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে রাস্তাঘাটসহ শতাধিক বসতবাড়ি ও শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। যার কারণে হরিপুর ইউনিয়নের মাদারীপাড়া ও পাড়াসাধুয়া গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি বাড়ার সাথে-সাথে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই গেছে। নদীগর্ভে বিলিন হওয়া পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাশাপাশি ভাঙনের মুখে পরা পরিবারগুলো ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারি বেসরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজারও একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। বিশেষ করে হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত রাক্ষুসি তিস্তানদীতে পলি জমে তিস্তার মূলনদী একাধিক শাখায় পরিণত হয়েছে। পানি বাড়ার সাথে-সাথে ওইসব শাখা নদীতে তীব্র ¯্রােত দেখা দিয়েছে। ¯্রােতের কারণে উজানের ভাঙনে তিস্তার বালু চরের সবুজের সমারহ ও বসতবাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে। বর্তমানে তিস্তার চরাঞ্চলে বেগুন, মরিচ, পটল, কড়লা, শষা, ঢেড়স, তোষাপাটসহ নানাবিধ ফসলের সমাহার দেখা দিয়েছে। কিন্তু সর্বনাশা তিস্তা সেসব ফসল ঘরে তুলতে দিচ্ছে না।
গত এক সপ্তাহ ধরে বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ায় অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতা অনেকটা বেড়ে গেছে। হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের কিছু-কিছু এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। হরিপুর ইউনিয়নের মাদারীপাড়া গ্রামের রন্জু মিয়া জানান, গত সোমবার রাত থেকে পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণেই বিভিন্ন চর প্লাবিত হয়ে পড়ে। ডুবে গেছে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারছে না চরাঞ্চলবাসি। বর্তমানে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অনেক পরিবার তাদের গৃহপালিত পশুপাখি, ধান, চাল, আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, তার ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ড পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং দুইটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এখনো পানিবন্দি পরিবারগুলো চরেই বসবাস করছে। পানি বেড়ে গেলে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী জানান, পানি আবারও বাড়ছে। চরবাসিকে বন্যা পূর্ববর্তী প্রস্তুুত থাকার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে গত ২ মে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার তিস্তানদীর বিভিন্ন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন তিস্তা নদীকে রক্ষা এবং ভাঙন রোধ করতে হলে নদীর গতিপথ একমুখি করতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেছেন।
অপরদিকে গত ২০ মার্চ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি কুড়িগ্রাম হতে নৌ-পথে স্প্রিড বোর্ডে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং কাপাসিয়া ইউনিয়নের কছিম বাজার খেয়াঘাটে স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।ছবি ০১
from BDJAHAN https://ift.tt/2FOuPDA
via IFTTT