বিশ্বনাথে ভেঙে গেল, বাঁশের সাঁকো, দুর্ভোগে এলাকাবাসি

মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ থেকে :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী নদীর ওপর সেতু নেই। নদীটির ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কিন্তু আজ শনিবার নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটিও ভেঙে যায়। এতে এলাকার শিক্ষার্থীসহ মানুষকে পুহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের বিলপার গ্রামের দক্ষিণ পাশে ও রামপাশা ইউনিয়নের আশুগঞ্জ বাজারের নিকটবর্তী স্থানে এ বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। উপজেলার খাজাঞ্চী ও রামপাশা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ এ সাঁকো দিয়ে আসা যাওয়া করেন। গত শনিবার দুপুরে সাঁকোটি নদীগর্ভে চলে যায়। এতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে আসতে পারেননি। বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে ২০টি গ্রামের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রায় ১০বছর ধরে এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওই নদী পারাপার করেন পথচারীরা। প্রতিদিন এ পথে দুটি ইউনিয়নের বিলপাড়, দ্বিপবন, বাবুনগর, পাঁচঘরি, দোহাল, পালেরচক, কোনাপাড়া, নোয়াপাড়া, শ্রীপুরসহ ২০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সাঁকোটির পূর্ব পাশে আশুগঞ্জ বাজার ও আশুগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ এবং আশুগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নদীর এপার ওপারে ২০গ্রামের মানুষের বসবাস। প্রতিনিয়ত দুটি ইউনিয়নের হাজার-হাজার মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে নানা উপায়ে নদী পারাপার হয়ে থাকেন। দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছরের এ এলাকার মানুষের যাতায়াত খাজাঞ্চী নদীর ভোগান্তি লাঘবে কোনো ব্রীজ নির্মাণ করা হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় ওই এলাকার মানুষের বাঁশ-কাঠ অর্থ ও স্বেচ্ছা শ্রমে নির্মিত করেন বাঁশের সাঁকো। প্রতি বছর এলাকাবাসীর অর্থায়নে নির্মিত সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন শতশত মানুষ চলাচল করে আসছে। এলাকাবাসীর অর্থায়নে নির্মিত বাঁশের সাঁকো ভেঙে যায়।
খাজাঞ্চী নদীর ওপর একটি ব্রীজের অভাবে দু’পাড়ের কৃষক তাদের ফসল উৎপাদন, ফসল ঘরে ও হাটবাজারে নিতে চরম ভোগান্তিতে পরতে হয়। সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় ২০ গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে চাঁদা হারি করে নিজেরা পরিশ্রম করে খাজাঞ্চী নদীর ওপরে সাঁকো নির্মাণ করেন। প্রতিবছর সরকার কোটি-কোটি টাকা গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট নির্মাণে বরাদ্দ দিলেও নিদিষ্ট জায়গায় সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। তবে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী খাজাঞ্চি নদীর ওপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করে হাজার হাজার মানুষের দূভোগ লাঘব করা হউক। দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২০ পল্লী এলাকা হওয়া সেখানে বিভিন্ন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছে এই এলাকার জনসাধারণ। আবার অনেক স্থানে রাস্তার অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা শত ওয়াদা দিলেও তা বাস্তবে মিলছে না। খাজাঞ্চি নদীর ওপর একটি ব্রীজ নির্মাণ করার জন্য সরকারের প্রতি জোরদাবী জানান তারা।
বাবুনগর গ্রামের শংকর বিহারী দাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণে দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। কিন্তু এতে কোনো ফল হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। কিন্তু সেটিও ভেঙে যায়।
দোহাল গ্রামের আতিক মিয়া বলেন, নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ভোটে পাস করার পর আর প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকে না।
উপজেলার খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, খাজাঞ্চী নদীর ওপর একটি ব্রীজ নির্মিত খুবই দরকার। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে।
রামপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর এলাকার মানুষ বঞ্চিতের কথা স্বীকার করে বলেন, ওই স্থানে সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আবেদন করা হয়েছে। দ্রুতই এর একটা ফল পাওয়া যাবে বলে আশাবাদি।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ ভূইয়া বলেন, এলাকায় নতুন যোগদান করেছি। তবে এলাকাবাসী এই নদীর উপরে সেতু নির্মাণের আবেদন করলে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করব।


from BDJAHAN https://ift.tt/2J26ZpX
via IFTTT
Next Post Previous Post