চর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের দাবি গাইবান্ধার মানুষের

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা প্রতিনিধি : মূল ভূ-খন্ডের মানুষদের নদীভাঙনের শিকার হয়ে একটা সময় আশ্রয় হয় চরাঞ্চলে। কিন্তু সেই চরাঞ্চলে সব সরকারি-বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সেবা পাওয়া যায়না। ফলে অবহেলিত ও বঞ্চিত হচ্ছে চরাঞ্চলের বসবাসকারী সহজ-সরল মানুষ। ফলে ঘটছে বাল্যবিয়েসহ মা ও নবজাতক শিশুর মৃত্য। মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা থেকে। তাই চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে চরবাসীর কল্যাণে দ্রুত চর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।

২৬ জুন বুধবার দুপুরে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া এলাকায় ফ্রেন্ডশীপ সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে চর জনগোষ্ঠীর সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ বিষয়ক মতবিনিময় সভার মুক্ত আলোচনায় দ্রুত চর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের দাবি করেন অংশগ্রহনকারীরা। ফ্রেন্ডশীপ ইনক্লুসিভ সিটিজেনশীপ প্রকল্পের উদ্যোগে এই সভার আয়োজন করা হয়।

ফ্রেন্ডশীপের স্থায়ীত্বশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন (এসইডি) প্রকল্পের পরিচালক কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ফ্রেন্ডশীপের ম্যানেজার (এডুকেশন) মনিরুজ্জামান আহমদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন, সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম আবু হানিফ, ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আব্দুল হালিম টলষ্টয়, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার রায়, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আ. ছামাদ, কামারজানী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির এবং ফ্রেন্ডশীপের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী আব্দুস সালাম প্রমুখ।

ফ্রেন্ডশীপ ও ফ্রেন্ডশীপ সেন্টার নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করেন ইনক্লুসিভ সিটিজেনশীপের উপ-মহাব্যবস্থাপক আহমেদ তৌফিকুর রহমান ও ফ্রেন্ডশীপের অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার মাহাবুবুর রহমান ভুঁইয়া। মতবিনিময় সভায় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, এনজিও কর্মকর্তা ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৮০ জন উপস্থিত ছিলেন।

মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে দাতাসংস্থা এরিক্সজলপেন এবং ফ্রেন্ডশীপ লাক্সেমবার্গ এর আর্থিক সহায়তায় ২০১২ সাল থেকে গাইবান্ধায় ফ্রেন্ডশীপ ইনক্লুসিভ সিটিজেনশীপ প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত চরবাসীর সাথে কাজ করছে। প্রকল্পের প্রারম্ভিক পর্যায়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, চরাঞ্চলে পারিবারিক সহিংসতা, যৌতুক, বাল্যবিয়ে ও অন্যান্য সামাজিক কুসংস্কার বিদ্যমান। এ গবেষণার তথ্যে ৬৮ শতাংশ মানুষের উত্তর ছিল, পঞ্চম শ্রেণি পাশের সাথে সাথে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রচলন এবং চর এলাকায় ৭২ শতাংশ মেয়ে শিশু বাল্যবিয়ের শিকার হতো।

প্রকল্পটি চর এলাকায় কার্যক্রম শুরুর পর কিছু ইতিবাচল পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। নিয়মিত মাসিক সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ সভা, প্রচারণা, নিবিড় পর্যবেক্ষণ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়, স্থানীয় পর্যায়ে আইনি পরামর্শ সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন, অভিভাবক ও শিক্ষক সমাবেশ আয়োজন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রিক বাল্যবিয়েবিরোধী সহায়ক সমাবেশ, এডভোকেসী সভা এবং সর্বপরি চর থিয়েটার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনায় ও সামাজিক কুসংস্কার নির্মুলে জোড়ালো ভূমিকা রাখছে।

কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার চরাঞ্চলে এ পর্যন্ত তিন শতাধীক বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাল্যবিয়ের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। চরাঞ্চলের সামাজিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ইনক্লুসিভ সিটিজেনশীপ তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে জানানো হয় মতবিনিময় সভায়।



from BDJAHAN https://ift.tt/2IQmNMn
via IFTTT
Next Post Previous Post