আত্মহত্যা সমাধানের পথ নয় বরং ঘৃণ্য কাজ
মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন :
আত্মহত্যা একটি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি। আজকাল পত্রিকার পাতায় কিংবা সোস্যাইল মিডিয়াতে আত্মহত্যার সংবাদ প্রায় দেখা যায়। ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ ও ঘৃণ্য কাজ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কলহ এবং যৌতুক নিয়ে ঝগড়া-বিবাদকে কেন্দ্র করে , অভিভাবক তথা পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে অভিমানজনিত, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার ফলে, আরোগ্য থেকে হতাশ হয়ে , প্রেমে বা ভালোবাসায় ব্যর্থ, ব্যবসা-বাণিজ্যে বা শেয়ার বাজারে বারবার ব্যর্থ, ইভটিজিং, ধর্ষণ, মানসিক অশান্তি সহ নানা সমস্যায় পড়ে মানুষ আত্মহত্যার এ নিন্দিত পথ বেছে নেয়।
আত্মহত্যার পরিণতি সম্পর্কে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, “আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।” {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০}
আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।” {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫}
আত্মহত্যার ব্যাপারে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে।”[বুখারী : ৫৭০০; মুসলিম : ১১০]
হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন,
“যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরদিন সে জাহান্নামের মধ্যে অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে, যে ব্যক্তি লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের মধ্যে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তার দ্বারা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৪৪২)
রাসূল (সা) আরো ইরাশাদ করেছেন,
‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শার আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে। আর যে নিজেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সে নিজেকে উপর থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।’ [সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৯৮৭; তাবরানী : ৬২১]
জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন,
‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ [বুখারী : ৩২৭৬; মুসলিম : ১১৩]
এমন কি আত্মহত্যা তো দূরের কথা, মৃত্যু কামনাও করা যাবে না। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন,
“তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।” [বুখারী : ৫৬৭১; মুসলিম : ৬৯৯০]
আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে পরিবার, সামাজিক ও রাষ্ট্রীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা, ইসলামিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা , রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি উপায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মসজিদের ইমাম ও খতীব এবং ওয়াজীনগনকে আজগুবি কিচ্ছা কাহিনী না বলে আত্মহত্যার পরিণতি সম্পর্কে ওয়াজ নসীহত করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ক্লাসে কিংবা এসেম্বলিতে সকল ছাত্র- ছাত্রীদেরকে আত্মহত্যার না করার ব্যাপারে সচেতনতা কিংবা আত্মহত্যা সমাধানের পথ নয় এই ব্যাপারে শিক্ষা দিতে হবে।
প্রত্যেক পিতা মাতার উচিৎ তাদের সন্তানদেরকে কুরআন ও প্রয়োজনীয় ইসলামী জ্ঞান শিখিয়ে তবেই অন্য কোনো কিছু শেখানো। দ্বিতীয়ত তাদেরকে ইসলামী কায়দায় লালন-পালন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তাহলে বুঝতে পারবেন, কখন সন্তানকে শাসন করা যাবে আর কীভাবে সন্তানকে শাসন করতে হবে না। না জেনে প্রকৃত তথ্য না বের করে সন্তানদের অযথা বকাঝকাও পরিহার করতে হবে। তাদেরকে মানসিক কষ্ট কখনো দেয়া যাবে না যা তাদেরকে আত্মহত্যার মতো চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে।
প্রতি মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছ, “হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা বাক্বারা, আয়াত নং ১৫৩) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
“এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের-” ( সূরা বাক্বারা, আয়সত-১৫৫)
মোট কথা যখনই নিজেকে অসহায় ও আশাহত মনে হয় এবং আত্মহত্যার চিন্তা আসে তখনই ইসলামে আত্মহত্যা নাজায়েয এর পরিণতি জাহান্নাম এবং পরিবারের সদস্যদের কথা মনে করতে হবে। সাথে সাথে মনে করতে হবে আল্লাহই আমার প্রধান সহায়ক। তিনিই আমার সব সমস্যার সমাধান দাতা কিংবা মুক্তি দাতা। তাছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায পড়ার সাথে নফল নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দোয়া ও সাহায্য কামনা করতে হবে।
আত্মহত্যা সমস্যার সমাধানের পথ হতে পারে না বরং এইটা ইসলামের দৃষ্টিতে জগন্য অপরাধ।
লেখক : কলামিস্ট।
লেখা প্রেরক :
মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন।
C/O, মাওলানা মন্জিল, চন্দনাইশ পৌরসভা, ওয়ার্ড নং ০২, পূর্ব জোয়ারা (৪৩৮০), চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম,বাংলাদেশ।
from BDJAHAN https://ift.tt/2T40f1z
via IFTTT