স্বাগত ২০১৯
বিশেষ প্রতিনিধি : মহাকালের গহ্বরে বিলীন হয়ে গেল আর একটি বছর। যোগ হলো নতুন আর একটি বছরের। স্বাগত ২০১৯। পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই সৌরজগতের নিখুঁত নিয়মে প্রতিদিন সূর্যোদয় হয়। প্রকৃতির নিয়মেই নতুন আরেকটি দিন, আরেকটি বছরের, নতুন আরেকটি সংখ্যার সূচনা। ২০১৯। আগামীর দিনগুলোতে অনিশ্চয়তা কেটে গিয়ে শুভময়তা ছড়িয়ে যাবে দেশে, পৃথিবীময়। আশাজাগানিয়া সূর্যকীরণ যেন সে দ্যুতিই ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রত্যেকের মনে-প্রাণে।
গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন আজ। আজ ২০১৯ সালের প্রথম দিন। নতুন বছরটি যেন প্রতি মানুষের মন থেকে সব গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। গত বছরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব খুঁজতে খুঁজতে নতুন বছরকে সামনে রেখে আবর্তিত হবে নতুন নতুন স্বপ্নের। বাংলাদেশে ইংরেজি নববর্ষ পালনের ধরন বাংলা নববর্ষ পালনের মতো ব্যাপক না হলেও এ উৎসবের আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া থেকে বাংলাদেশের মানুষও বিচ্ছিন্ন নয়।
প্রাচীন সূর্য সোমবার যে দিবসকে কালস্রোতে বিলীন করে পশ্চিমে অস্ত গেল, তা আজ ফেলে আসা দিন। থার্টিফার্স্টে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পরমানন্দে ২০১৯ সালকে বরণ করেছে। আজ নতুন দিনের নতুন সূর্যালোকে স্নান করে সিক্ত হবে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিগত বছরের সব কালিকা ধুয়ে-মুছে নতুন কেতন ওড়াতে ওড়াতে এগিয়ে যাবে সময়, সভ্যতা, হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানিমুক্ত রাজনীতি, অর্থনীতি আর সংস্কৃতি। অনাবিল স্বপ্ন আর অফুরন্ত প্রাণ উন্মাদনা নিয়ে নতুন সূর্যের আলোয় অগ্রসর হবে মানুষ। বিগত সময়ের সব ভুল শুধরে নেয়ার সময় এসেছে আজ। স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া ২০১৮ সালটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে জঙ্গিবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেছে নতুন এক মহাসড়কে। বাংলাদেশের শন্তিকামী মানুষ ২০১৯ কে বরণ করে নিয়েছে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বছরে। সবার প্রত্যাশা উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যে কাজগুলো অসম্পূর্ণ রয়েছে এ বছরে তা বেশিরভাগ পূরণ হবে।
বিদায়ী ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে অনেক ক্ষেত্রে যেমন বহু প্রাপ্তি ঘটেছে, তেমনি অনেক প্রত্যাশাও পূরণ হয়নি। মানব জীবনের চিরসত্য লাভ-অলাভ, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি এ সব বিষয় ঘটেছে বিদায়ী ২০১৮ সালে। আসন্ন ২০১৯ সালেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবুও গত বিদায়ী ২০১৮-এর তুলনায় বেশি আনন্দ, অধিক সুখ, শান্তি, সদা সর্বদা হাসি-খুশি ভাব বিরাজ করুক, উন্নতি ও সমৃদ্ধি বয়ে আসুক সবার মাঝে- এ প্রত্যাশা সবার।
২০১৮ খ্রিস্টাব্দ শেষ হয়ে এলো নতুন সাল ২০১৯। গেল বছরটি যার যার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ভাবনায় নানাভাবে মূল্যায়িত হবে। তবে আমাদের জাতীয় জীবনে বিদায়ী বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০১৮ বেশ ঘটনাবহুল একটি বছর। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঘটেছে উত্থান-পতনের খেলা। তার পরও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
বিদায়ী বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ইতিমধ্যেই জাতীয় জীবনে ঘটে গেছে। ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো রোববার ৩০ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট বিপুল জয় পেয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা টানা হ্যাটট্রিক জয়ের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল গৃহীত হয়েছে। নতুন বছরে উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আশা মানুষের।
গত রাত ১২টার পর পরই সারাবিশ্বে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। বর্ষবরণের আনন্দোৎসব করেছে সর্বস্তরের মানুষ। হিসাবের খাতায় ব্যর্থতার গ্লানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নতুন বছরে শান্তিকামী মানুষের প্রার্থনা ছিল- আর কোনো সহিংসতা নয়, কোনো হত্যা-খুন কিংবা হানাহানির রাজনীতি নয়। অস্ত্র বা হানাহানির মহড়া হবে না, থেমে যাবে সব যুদ্ধ-সন্ত্রাস। শেখ হাসিনার সরকার নতুন বছরে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী উন্নত বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে।
দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের দেশের কালো তকমা মুছে ফেলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জঙ্গিবিরোধী ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি শুধু দেশেই নয়, এখন সারাবিশ্বও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শুধু মানবতার কারণে প্রায় সাত লক্ষাধিক অসহায়-বিপন্ন মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় এবং তাদের বাসস্থান ও মুখে অন্ন তুলে দিয়ে সারাবিশ্বেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মানবতার মা’ হিসেবে আন্তর্জাতিক উপাধি পেয়েছেন।
২০১৮ সালে বাঙালির জাতীয় জীবনে আরেকটি বড় ঘটনা ঘটেছে ১২ মে বাংলাদেশ সময় ভোর ২টা ১৪তে। (১১ মে ২০১৮ ইউটিসি) এ সময় কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
অন্যদিকে এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে এ বছর। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের যে কোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।
বছরজুড়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা সংকট। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী যে গণহত্যাসহ অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছিল তা নিয়ে চুপ থাকা এবং সংকট নিরসনে ভ‚মিকা না রাখায় অং সান সুচিকে তিরস্কারের মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেকবার। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা একের পর এক তাকে দেয়া পদক ও সম্মাননা ফিরিয়ে নিয়েছে। ৯২ বছর বয়সে নির্বাচন করে আবারো মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ।
নতুন বছরে আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জঙ্গিবাদ দমন, সংঘাত-সহিংস রাজনীতির বদলে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত, বেকারত্ব দূরীকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতাবিরোধী অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ, অর্থনীতির আরো গতিসঞ্চার, সংসদকে কার্যকর করে নতুন বছরে একটি শান্তিময় সমৃদ্ধশালী দেশ উপহার দিতে ২০১৯ সাল সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই সামনে এসেছে।
বাংলাদেশ বিগত একটি বছর কাটিয়েছে অনেকটাই সাফল্যের সঙ্গে। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের কলঙ্ক মুছে বাংলাদেশ আজ পরিচিত পাচ্ছে অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে। শুভ খ্রিস্টীয় নববর্ষ ২০১৯।
from BDJAHAN http://bit.ly/2Sw7dIe
via IFTTT