রক্তযোদ্ধা কবি মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন

আদনান ফায়সাল : রক্তযোদ্ধা মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন একজন সফল সংগঠক ও সমাজ সেবক। তবে তিনি একজন ভলন্টিয়ার ও রক্তযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তিনি একজন কবি এবং প্রতিবাদী লেখকও বঠে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্ম তাঁর।২৮শে সেপ্টম্বর ১৯৯০ সালে  চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার নির্গত মাওলানা মন্জিলে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার নাম মরহুম মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন রহ: (তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় সাবেক মুহাদ্দিস,সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় সাবেক অধ্যক্ষ,চুনতী হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় শায়খুল হাদীস পদে নিয়োজিত ছিলেন।)মাতার নাম ফাতেমা বতুল। তাঁর দাদার নাম মুফতি শফিউর রহমান (রহঃ)। তিনি “মুফতি সাহেব” নামে সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি নিজ এলাকা চন্দনাইশে হাশিমপুর মকবুলিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসা এবং জোয়ারা ইসলমিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ পদে ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সহিত নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।

এমন কি তাঁর নানাও একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন এবং অলীয়ে কামেল ছিলেন।তিনি সাবেক অধ্যক্ষ বাজালিয়া হেদায়াতুল ইসলাম সিনিয়ার মাদ্রাসা ও হুলাইন ইয়াছিন আউলিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসায় সুনাম ও দক্ষতার সহিত নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চুনতী হাকীমিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত মুহাদ্দিস এবং পদুয়া হেমায়াতুল ইসলাম সিনিয়ার মাদ্রাসা (আল জামেউল আনওয়ার)’য় সাবেক মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি চুনতী মিয়াজী পাড়া হযরত শাহ আবু শরীফ জামে মসজিদে পেশ ইমাম ও খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি চন্দনাইশ সাতবড়ীয়া আরিফ শাহ পাড়া জামে মসজিদ এবং কুসুমপুরা জামে মসজিদ (জিরি) এ ইমাম ও খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমন কি তিনি বাংলাদেশ ছাড়া বার্মা (মায়ানমার) এবং ভারতের কাশমীরী গেইট, উঁচী মসজিদ দিল্লী তে পেশ ইমাম ও খতীব হিসেবে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের দিল্লী প্রদেশে“শ্রেষ্ঠ খতীব” হিসেবে সম্মাননা সনদ এবং পুরস্কার লাভ করেন। এমন কি এই আলেমে দ্বীনকে অভিজ্ঞ অধ্যক্ষ ও প্রশাসক হিসেবে স্বীকৃতি স্বরুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্য্যায়ে “শ্রেষ্ঠ শিক্ষক” হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেন । যিনি একই সাথে চুনতীর ঐতিহাসসিক ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সিরাতুন্নবী (সাঃ) এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত শাহ হাফেজ আহমদ (রহঃ) এর শ্বশুর ছিলেন। মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন ৩ভাই ২বোনের মধ্যে সবার ছোট। তাঁর বংশ পরিক্রমা হল- মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন বিন মোহাম্মদ ফখর উদ্দীন বিন শফিউর রহমান বিন সৈয়্যদ হাসান মিয়াজি বিন নুরুদ্দীন।

তিনি জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা থেকে ২০০৬ সালে দাখিল, ২০০৮ আলিম, ২০১১ সালে ফাজিল এবং ছোবাহানিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম থেকে  ২০১৩ সালে কামিল (এম.এ) পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। তাছাড়া ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়ে অনার্স ও মাস্টার্স যথাক্রমে পাশ করেন।  তিনি দেশ সেবার লক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাবস্থায় B.N.C.C তে ভর্তি হয়।

 মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন একজন রক্তযোদ্ধা নামে বেশ পরিচিতি। অনেকেই আবার রক্তের ফেরিওয়ালা নামেও ডাকে। সময় অসময়ে যে কোনো মূহুর্তে প্রতি চার মাস পর রক্ত দান করেন। কারো রক্তের প্রয়োজন হলে বিভিন্ন রক্ত সংগঠন হতে যোগাড় করার অপ্রাণ চেষ্টা করেন। বিশেষ করে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আত্মমানতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।  তিনি ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুর মাধ্যমে জীবনের প্রথম রক্ত দিয়েছিলেন নগরীর রেড ক্রিসেন্ট,আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রামে এক মুমূর্ষু রোগীকে। তিনি রক্ত সংগঠন ছাড়া অসংখ্য সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত এবং একই সাথে দায়িত্ব পালনও করছেন।

মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীনকে “কণিকা- একটি রক্তদাতা সংগঠন” হতে ২০১৬ সাল ও ২০১৭ সালে যথাক্রমে সুপার ডোনার সম্মাননা স্মারক  প্রদান করা হয়। আর ২০১৭ সালে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে আজীবন রক্তদাতা সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। তাছাড়া ২০১৫ সালে ওয়ার্কস ফর গ্রীণ বাংলাদেশ (ডব্লিউ জি বি) সংগঠন হতে বেস্ট ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।  ২০১৩ সালে “জীবনবাতি” সংগঠন থেকে বেস্ট অর্গানাইজার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

কিশোরকাল থেকে দেয়ালিখায় দিয়ে লেখালেখি শুরু করেন।বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পাক্ষিক পত্রিকা, মাসিক পত্রিকা ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় তার প্রবন্ধ-নিবন্ধ,  গবেষণা ধর্মী লেখা, ছড়া ও কবিতা  প্রকাশিত হয়েছে। এমন কি ওপার বাংলা (কলকাতা)’র বিভিন্ন অনলাইন ব্লগ ও প্রিন্ট মিডিয়াতেও লেখা পাবলিশ হয়েছে।

বহু প্রতিভাবন সংগঠক ও কবি মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন লেখক ও গবেষক সমাজের অহংকার। তিনি লেখালেখির মাধ্যমে মাদক, অপসংস্কৃতিক ও যানজট সহ বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা বিষয় তুলে ধরেন। আল্লাহ পাক তাঁকে দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য দান করুক।

লেখক : কলামিস্ট।



from BDJAHAN http://bit.ly/2ArVCCT
via IFTTT
Next Post Previous Post