আপনার দুঃস্বপ্নই বলে দিবে আপনার স্বাস্থ্যের কথা।
আপনার দেখা সবচেয়ে বাজে দুঃস্বপ্ন কী? আপনি প্রায়ই কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেন? এটা কী এমন যে আপনি মারা যাচ্ছেন নাকি আপনার পছন্দের কেউ বিপদে পড়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনি কিছু করতে পারছেন না? অথবা এমনও হতে পারে আপনি স্বপ্নে দৌড়াচ্ছেন আর হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যায় আর আপনি উঠে বসে পড়েন। সেই সময়ে আপনার একটা জিনিসই মাথায় থাকে, যাক তাহলে স্বপ্নটা শেষ হলো! দুঃস্বপ্নকে মূলত সেই স্বপ্নের শ্রেণিতে রাখা হয় যেগুলো বাস্তববাদী আর সেগুলো প্রায়ই মানুষের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। এ সবগুলোই জটিল অভিজ্ঞতা। যদিও দুঃস্বপ্নের সময় ভয়ই বেশি আধিপত্য বিস্তার করে তবে ২০১৪ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে দুঃখ, রাগ, গ্লানি,হতাশাও দুঃস্বপ্নের সময় অনুভূত হয়। ৩৫১ জনকে নিয়ে করা অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ দুঃস্বপ্নে যিনি স্বপ্ন দেখেন তিনি শারীরিক কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হন অথবা কেউ তাকে তাড়া করে শারীরিক ক্ষতি করার জন্য। তবে আপনি যদি প্রায় প্রতিদিনই এরকম দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন তাহলে এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ একটি লক্ষণ। ধারণা করা হয় যে ২-৮% পূর্ণবয়স্ক মানুষ এই দুঃস্বপ্নের জন্য মানসিক প্রশান্তি পান না এবং এর জের ধরে সারাদিন কাজ করার পূর্ণ শক্তি পান না। শুধু তা-ই না নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকলে সেটা একজন মানুষের ঘুমের প্যাটার্ন বিঘ্ন ঘটায়। কিছু দুঃস্বপ্ন আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নির্দেশ করে বিশেষ করে উদ্বিগ্নতাসহ পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার দেখা দেয়।
আরেক ঘটনা হচ্ছে রেম স্লিপ বিহেভিয়ার ডিসঅর্ডার। রেম হচ্ছে র্যাপিড আই মুভমেন্ট। যে সময়ে সবচেয়ে ভালো ঘুম হয় সেটাই হচ্ছে রেম। রেম স্লিপ বিহেভিয়ার ডিসর্ডারে একজন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখাকালে চিৎকার করে উঠে বা ভয়ে দ্রুত ঘুম থেকে থেকে উঠে পড়ে। শুধু তাই না এই অসুখের ফলে পার্কিনসন ডিজিসও দেখা যায়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে দুঃস্বপ্ন আমাদের অতীতের কষ্টের স্মৃতিকে আমাদের মনে করিয়ে দেয়। তবে এ কষ্টের স্মৃতি গুলো আমাদের সামনে আসার ফলে সেটা সহ্য করার একটা ক্ষমতা আমাদের মধ্যে জন্মে। মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড ছিলেন স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। তার বিখ্যাত বই ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমসে ফ্রয়েড বলেন স্বপ্ন আসলে আমাদের আশার, আকাঙ্ক্ষার ও চিন্তাভাবনার একটি রূপ যেটি আমাদের মস্তিষ্কে উদ্ভটভাবে গঠিত হয়।
এক তত্ত্বে এলিশ বলেন স্বপ্ন আমাদের সমস্যা সমাধানের একটি ব্যায়ামের মতো। অর্থাৎ সে হিসেবে দুঃস্বপ্ন হচ্ছে আমাদের মনের আবেগিক বিষয়। দৈনন্দিন কার্যকলাপে আমরা যেসব সমস্যার সমাধান করতে পারি না দুঃস্বপ্নে আমরা সেই সমস্যার একটি রূপ ও বিভিন্ন চরিত্র দেখতে পাই যা সেই সমস্যাগুলোকে আমাদের বাস্তব জীবনে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বাতলে দেয় ও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। এলিশ আরো বলেন, কেউ যদি তার রোজকার চলাচলে অতিরিক্ত মানসিক সমস্যায় ভোগে তাহলে সেটাই তাকে দুঃস্বপ্ন দেখাতে পারে এবং এর জন্য ঘুমানোর সমস্যা তথা ইনসোমনিয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে জনি বেঞ্জামিনের ক্ষেত্রে তার মানসিক উদ্বিগ্নতা তাকে ঠিকভাবে ঘুমাতে দিত না। বিশেষ করে যখন তার বয়স বিশের ঘরে ছিল। বর্তমানে ৩১ বছর বয়সী জনি বেঞ্জামিন জানান মানসিক উদ্বিগ্নতার কারণে তিনি ঘুমাতে তো পারতেনই না, উল্টো ঘুমাতে গেলে রাত্রে ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাটি করেছেন অনেক সময়। একজন স্লিপ সাইন্টিস্ট বিল ফিশ বলেন, একজন মানুষ গড়ে প্রতি সপ্তাহে একবার দুঃস্বপ্ন দেখে। কিন্তু তারা সেটা মনে রাখে না কি ভুলে যায় সেটাই মূল কথা। তার মতে কেউ যদি নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকে তাহলে সেটা তার জন্য মোটেও ভালো কিছু নয়।
নিয়মিত দুঃস্বপ্ন পিটিএসডি এর লক্ষণ। একজন ব্যক্তি কার জীবনে কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতায় পড়ে মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। এটা আমাদের মন অবচেতনভাবে দুঃস্বপ্নের মাধ্যমে বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেয় এবং আমাদের মানসিক সমস্যা বাড়তে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে নিয়মিত দুঃস্বপ্ন বাই পোলার ডিজঅর্ডার এবং সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ। ঘুমের চারটি স্তর আছে। প্রথম তিনটি স্তরে চোখের নড়াচড়া কম হয় এটিকে বলে স্লো আই মুভমেন্ট। আর চতুর্থ স্তরটি সবচেয়ে গভীর এটাকে বলে রেপিড আই মুভমেন্ট সংক্ষেপে REM বলে। মানুষ স্বপ্ন দেখে মূলত এই রেম দশায় যখন তার কঙ্কাল পেশীগুলো প্রায় প্যারালাইজড অবস্থায় থাকে। আর যাদের এই রেম দশা পর্যন্ত ঘুম ঠিকমতো হয় না তাদের অনেক মানসিক সমস্যা দেখা যায়। ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো’র এক গবেষণায় দেখা যায় এরকম ৮০% লোকেরই মানসিক ব্যাধি বিশেষ করে পার্কিনসন ডিজিসসহ আরো অনেক ব্যাধি দেখা যায়। আবার এই রেম ঘুম আমাদের মানসিক আবেগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একজন মানুষ কত তাড়াতাড়ি ঘুমের রেম দশায় যেতে পারে তা দেখে তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেওয়া যায়।
আপনি যদি নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন এবং তারপর এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে ডাক্তার দেখাতে যান তাহলে ডাক্তার আপনাকে প্রথম যে প্রশ্নটি করবেন সেটি হবে আপনার জীবন ধারায় কোনো পরিবর্তন এসেছে কী না? এ জীবন ধারা পরিবর্তনের মধ্যে হতে পারে আপনি নতুন কোনো ওষুধ খাচ্ছেন যেটা আপনার মানসিক সমস্যা তৈরি করছে, হতে পারে আপনার দৈনন্দিন খাবারে পরিবর্তন এনেছেন, কিংবা কোনো ঘটনার দ্বারা মানসিকভাবে এতটাই প্রভাবিত হয়েছেন যে আপনি সেটা মেনে নিতে পারছেন না অথবা স্বাভাবিক জীবন ধারায় ফিরতে পারছেন না। আবার আপনার যদি আগে থেকে কোনো শারীরিক সমস্যা যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া কিংবা শ্বাসকষ্ট থেকে থাকে তাহলে আপনার প্রায় দুঃস্বপ্ন দেখা খুব অস্বাভাবিক কিছু না।
The post আপনার দুঃস্বপ্নই বলে দিবে আপনার স্বাস্থ্যের কথা। appeared first on BD Time.
from BD Time http://bit.ly/2Sk1vcd
via IFTTT